কামরুজ্জামান, দ্য রিপোর্ট, প্যারিস, ফ্রান্স থেকে : বিশিষ্ট অনলাইন একটিভিস্ট ও ২০২৪ সালের ছাত্র-গণআন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার ডাক্তার পিনাকী ভট্টাচার্য আওয়ামীলীগ ও ইন্ডিয়াকে "পাঁচ সিকার ছাগল" উল্লেখ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ভারতকে মোকাবেলা করতে না পারলে বাংলাদেশে শান্তি আসবে না।” তাদেরকে চিরতরে দূর করতে না পারলে বিপ্লব ব্যর্থ হবে।

তিনি বলেন, “কথায় আছে লাখ টাকার বাগান খায় পাচঁ সিকার ছাগলে। এই পাচঁ সিকার ছাগল চিনতে না পারলে বারবার বাংলাদেশের মানুষকে রক্ত দিতে হবে।

গতকাল শনিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি অভিজাত হোটেলে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ও প্রবাসীদের প্রত্যাশা - শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হিউম্যান রাইটস ফরওয়ার্ড আয়োজিত সেমিনারে সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ ফয়সাল আহমেদের সভাপতিত্বে ও বাংলা টেলিগ্রাম সম্পাদক শাহ সুহেল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন সংগঠন ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।

পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, বারবার প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে থেকে বিভিন্নভাবে দাবি জানানো নয়। কিন্তু বাস্তবিক হওয়ার কথা ছিল প্রবাসীরা বলবে এবং সেটি সরকার মেনে নিবে। আমাদেরকে এমন পরিস্থিতি তৈরী কর‍তে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা অর্থ যোগান দেয় সরকার তাদের তোষামোদি করে।

প্রবাসীরা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যোগানের অন্যতম উৎস উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রবাসীদের মুল্যায়ন করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। প্রবাসীদের সংগঠিত হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো বিশ্ব থেকে প্রবাসীরা পাঁচ বিলিয়ন ডলার রাষ্ট্রকে দিবে। এটি হলে সরাসরি প্রবাসীরা রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে চলে আসবেন।

প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। সুতারং প্রবাসীরা তাদের অধিকার আদায় করে নিবে।

নিজেকে বাংলাদেশের আমজনতার কন্ঠস্বর উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের অংশ হয়ে তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ করতে চান না, বরং দেশ ও মানুষের প্রয়োজনে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবিরাম ভুমিকা রাখতে চান এবং সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।
একই সঙ্গে বিশ্বের সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে প্রবাসে মুলধারার রাজনীতিতে অবস্থান করে নেয়ার আহবান জানান।

সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রান্স২৪ এর সাংবাদিক মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ বলেন, '৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পড়েছি। জাতিকে মিথ্যা ইতিহাস গেলানো হয়েছে। কিন্তু, '২৪ এর গণবিপ্লবএর মাধ্যমে সরাসরি ফ্যাসিবাদের পতন দেখার সুযোগ হয়েছে ১৮ কোটি বাংলাদেশীর। সেমিনারে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে ৪টি দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো ১. দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, ২.বিদেশ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ও দ্রুত ই-পাসপোর্ট প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা,৩.জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা, ও ৪.রাষ্ট্রীয় খরচে অভিবাসীদের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

ফ্রান্সে আইন পেশায় কর্মরত আইনজীবী আইনজীবী আকাশ হেলাল বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার উপায় তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। এ গণতন্ত্র স্বৈরাচার তৈরির সহায়ক।

সফররত বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম ভুইঁয় ছোটন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবার গণ-অভ্যুত্থানে তাদের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে কোন শাসক গোষ্ঠী স্বৈরাচার হওয়ার আগে ভাবতে বাধ্য হবে যে কেবল দেশে নয় প্রবাসে তাদের বিরুদ্ধে কোটি কণ্ঠস্বর তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেতনা লালন করেছে।

বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বাংলাদেশের পতাকাবাহী বিমানের ফ্লাইট চালু করার দাবি জানান।

ফ্রান্স বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মিয়া অন্তবর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা সাংবাদিক ও সংগঠক মাহবুব হোসাইন শেখ মুজিবুর রহমান কে ফ্যাসিবাদের জনক আখ্যা দিয়ে বলেন, বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে সার্বক্ষণিক সচেতন থাকতে হবে। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসররা যেন কোনো ভাবেই পুনর্বাসিত হতে না পারে। তরুন আইনজীবী মনোয়ার পাটোয়ারী অনতিবিলম্বে কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বিলুপ্ত করে নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালের আদলে অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠনের আহবান জানান। ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স- বিসিএফ সভাপতি এমডি নুর বলেন, অনেক শহীদ, রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে ফ্যাসিবাদের দোসর ও সহযোগীর সার্বক্ষণিক তৎপর। তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রতিটি প্রবাসীকে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ভুমিকা পালন করতে হবে।

সিনিয়র সাংবাদিক কামরুজ্জামান বর্তমান সরকারকে বিপ্লবী চরিত্র ধারণের আহবান জানিয়ে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। সুতরাং, ড. ইউনুসের সরকার সংবিধানের দোহায় দিয়ে বিপ্লবের চেতনা মলিন করতে পারেন না। সরকারকে সব বিষয়ে সংস্কারে হাত না দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা ফ্যাসিবাদের বিচার, আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পূর্নবাসন, পুলিশ-প্রশাসন ও বিচার বিভাগ থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরিয়ে দেশপ্রেমিকদে পদায়ন করে সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি আইনজীবী আকাশ হেলাল বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার আমুল সংস্কার দাবি করে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা করার আহবান জানান।

মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ আল আমিন প্রবাসী বিনিয়োগ বোর্ড গঠনের আহবান জানান।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শামীমা আক্তার রুবি, বিকশিত নারী সংঘের সভানেত্রী তৌফিকা শাহেদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মীর জাহান, জুনেদ আহমেদ, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ আজম,
হেলাল আহমেদ, অনুক্ত কামরুল, সৈয়দ ইরফান, কবি বদরুজ্জামান প্রমুখ।

এসব আলোচকরা বলেন, এই প্রথমবারের মতো অভিবাসী বাংলাদেশীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষা ভাবে স্টেক হোল্ডারের ভূমিকায় এসেছেন। চার দফা দাবি আদায়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে। ৫ই আগস্টের বিপ্লবকে সার্থক ও অর্থবহ করার জন্য প্রবাসে সকল বাংলাদেশিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।