দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:  বাজারে স্বস্তি ফেরাতে গত দুই মাসে ৬টি পণ্য-চাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড় করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে তদারকি। গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করছে। তারপরও স্বাভাবিক হচ্ছে না বাজার। মূল্য কমাতে ছয় পণ্যের শুল্ক ছাড় করা হলেও এর মধ্যে কেবল ডিমের দাম কমেছে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি পণ্যের দাম কমলেও চাল, ডাল, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে বাড়তি দরেই নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে ক্রেতাকে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও রামপুরা বাজারসহ বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি পাইজাম ও বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬৪ টাকা। সাত দিন আগেও ৫৪-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা, যা আগে ৫৫ টাকা ছিল।

প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ১৫৬ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিলিটার খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, ক্রেতা সাধারণ সাত দিন আগেও এই তেল ১৪৬ টাকা দিয়ে কিনতে পেরেছে। পাম তেল সুপার প্রতিলিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৩ টাকা, যা আগে ১৪৭-১৫১ টাকা ছিল।

এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা। সপ্তাহ আগে ১০০-১০৫ টাকা ছিল। দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা, যা সাত দিন আগে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৩৮ টাকা, যা সাত দিন আগেও ১২৭-১৩৫ টাকা ছিল।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। বাজারে যে চেইন রয়েছে তা ভাঙতে হবে। উৎপাদক বা আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা এই তিন পর্যায় রাখতে হবে। তবে বাজারে সিন্ডিকেট করে এই তিন পর্যায়ের ভেতর ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম অযথা বাড়াচ্ছে। তাদের দমন করতে হবে। এছাড়া পণ্যের দাম কমাতে শুধু শুল্ক ছাড় যথেষ্ট নয়, কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।

এদিকে বাজারে সাত দিনের ব্যবধানে পণ্যের দাম বাড়লেও কিছু পণ্যের দাম কমেছে। এর মধ্যে তদারকি জোরদার করার কারণে ডিমের দাম অনেকটা কমেছে। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। আগে ১৬০-১৬৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিকেজি আমদানিকরা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সঙ্গে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে ১৮৫-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সাত দিন আগেও ১৯০-২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রামপুরা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. আকরাম বলেন, বাজারে কারো নিয়ন্ত্রণ নাই। পণ্যের দাম কমাতে সরকার নানা সুবিধা দিলেও তা ভোক্তা পর্যন্ত আসছে না। ব্যবসায়ীরাই লাভবান হচ্ছেন। আমরা ক্রেতারা বেশি দরেই পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছি। কিন্তু বাজারে তেমনভাবে তদারকি দেখছি না। মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখছি কর্মকর্তারা অনিয়ম পেয়ে শুধু জরিমানা করছে।

জরিমানা গুনে আবারও সেই বাড়তি দরেই পণ্য বিক্রি করছেন। এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। অন্যান্য পণ্যের দাম সহনীয় করতে তদারকি চলমান আছে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।