দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয়ের ওপর কর দেওয়ার সময় চলছে। এক অর্থবছরে একজন ব্যক্তি যে আয় করেছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে তার সারা বছরের আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্ধারিত ফরমে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এই আয়কর রিটার্ন আগের চেয়ে সহজ করেছে এনবিআর। একইসঙ্গে ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসে আয়কর দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে সরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আয়কর নির্দেশনা অনুযায়ী, করযোগ্য আয় যাদের রয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই রিটার্ন জমা দিতে হবে। কোনো ব্যক্তির আয় যদি বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি হয়; মহিলা ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয়; গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আয় যদি বছরে ৫ লাখ টাকার বেশি হয়; তাহলে তাদেরকে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

যাদের অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে:
১. করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে।

২. আয় বছরের পূর্ববর্তী তিন বছরের যে কোনো বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকলে।
৩. করদাতা যদি কোনো ফার্মের অংশীদার হন।
৪. করদাতা যদি কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডারের কর্মচারী হন।
৫. করদাতা গণকর্মচারী হলে।
৬. করদাতা কোনো ব্যবসায় বা পেশায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে।
৭. করদাতার কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় থাকলে।
৮. করারোপযোগ্য আয় না থাকা সাপেক্ষে ২০ লাখ টাকার ঋণ নিতে হলে।
৯. আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তিতে ও বহাল রাখতে।
১০. সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের জন্য।
১১. সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে।
১২. সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হতে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও নবায়ন করতে।
১৩. সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ লাখ টাকার বেশি জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা না আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে।
১৪. ক্রেডিট কার্ডপ্রাপ্তি ও বহাল রাখতে।
১৫. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসাবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসাবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থায় সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ও বহাল রাখতে।
১৬. মুসলিম ম্যারেজ অ্যান্ড ডিভোর্স (রেজি.) অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর অধীন নিকাহ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৪০ নং আইন) এর অধীন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক ও বিশেষ ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৮৭২ এর অধীন রেজিস্ট্রার হিসাবে লাইসেন্স প্রাপ্তি বা ক্ষেত্রমতো নিয়োগপ্রাপ্তি বহাল রাখতে।
১৭. ট্রেডবডি বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে।
১৮. ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও নবায়নে।
১৯. যে কোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তি এবং বহাল রাখতে।
২০. লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো, কোস্টার ও ডাম্ব বার্জসহ যে কোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে।
২১. পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইট উৎপাদনের অনুমতি প্রাপ্তি ও নবায়নে।
২২. সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে। ২৩. সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি বা বহাল রাখতে।
২৫. কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে।
২৫. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে।
২৬. আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়।
২৭. ৫ লাখ টাকার বেশি পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়।
২৮. ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদী আমানত খোলা ও বহাল রাখতে।
২৯. ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে।
৩০. পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে।
৩১. মোটরযান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনোমিক এক্টিভিটিজে অংশগ্রহণ করতে।
৩২. ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানকারী পদমর্যাদায় কর্মরত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে।
৩৩. মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
৩৫. অ্যাডভাইজরি বা কনসালটেন্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ, নিরাপত্তা সরবরাহ সেবা বাবদ নিবাসী কর্তৃক কোনো কোম্পানি থেকে কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে।
৩৫. মাসিক পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে মাসিক ১৬ হাজার টাকার বেশি কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে।
৩৬. বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়নে।
৩৭. দ্বি-চক্র বা ত্রি-চক্র মোটরযান ব্যতীত অন্যান্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নরায়নকালে।
৩৮. এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড় করতে।
৩৯. বাংলাদেশে অবস্থিত ভোক্তাদের নিকট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে।
৪০. কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৫ সনের ১৮ নং আইন) এবং সোস্যাল রেজি. অ্যাক্ট, ১৮৬০ এর অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ লাভের আবেদনের ক্ষেত্রে।
৪১. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দ্যেশে নিবাসী কর্তৃক টেন্ডার ডকুমেন্টস দাখিলের সময়।
৪২. কোনো কোম্পানি বা ফার্ম কর্তৃক কোনো প্রকার পণ্য বা সেবা গ্রহণকালে।
৪৩. পণ্য আমদানি ও রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিল অব এন্ট্রি দিতে।
৪৪. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সময় সময়, সরকার কর্তৃক গঠিত অনুরূপ কর্তৃপক্ষ অথবা সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন নিতে।
৪৫. স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসাবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে এবং বহাল রাখতে।
৪৬. ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, মাইক্রোক্রেডিট অরগানাইজেশন, সোসাইটি এবং সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে এবং চালু রাখতে।
৪৭. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ নিতে বাড়ির মালিকের।
৫৮. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমে পণ্য বা সেবা সরবরাহ নেওয়ার সময় সরবরাহকারীর বা সেবা প্রদানকারীর।
৪৯. হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নকালে।
৫০. সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা সমজাতীয় কোন সেবা নিতে। ৫১. ধারা ২৬১ অনুসারে করদাতা হিসেবে নিবন্ধনযোগ্য কোনো ব্যক্তির রিটার্ন দিতে হবে।