দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:  ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেছেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড সম্পর্কিত কাজে কিছু সংস্কারের দরকার আছে। এ সংস্কারের বিষয়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি।

 

শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম, আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, বিএমবিএর সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

মমিনুল ইসলাম বলেন, ডিএসইর হিউম্যান রিসোর্স, টেকনিক্যাল দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমরা শিগগিরই সেটা করব। কিছু জায়গায় আমাদের স্বচ্ছতার অভাব আছে। এসব জায়গায় স্বচ্ছতা ফেরাতে আমরা কাজ করব। পুঁজিবাজারে কোথায় কোথায় সংস্কার প্রয়োজন, তা আজ সংবাদিকদের আলোচনায় উঠে এসেছে।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজার অর্থনীতির সুন্দরতম সৃষ্টি। তবে, আমরা সৃষ্টিটাকে অসৃষ্টি তৈরি করে ফেলেছি। সেটা আমাদের সামগ্রিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি। দেশের মাঝে দুর্নীতি, বিচারহীনতা, অদক্ষতা এবং ভুল সিদ্ধান্ত, সেই বিষয়গুলো পুঁজিবাজারে আছে। সেটারই ফল আজকের এই পরিস্থিতি। আমরা বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছি, যার জন্য মার্কেটে কারসাজি কমেনি। এতে বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্থতাকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অতিরিক্ত নির্ভরতা ব্যাংককে ধ্বংস করেছে, একইসাথে আমাদের অর্থনীতিকে শেষ করেছে। এটা থেকে আমাদের বের হতে হবে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ট্যাক্স সংক্রান্ত কিছু বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে। আমরা এনবিআরের সাথে এ বিষয়ে কাজ করছি। এতে এনবিআর বেশি ট্যাক্স পাবে, একইসঙ্গে বাজারের উন্নতি হবে। তা হবে মার্কেট ফ্রেন্ডলি।

ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ ও আইসিবির সংস্কার দরকার। এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা এবং আইসিবি চেয়ারম্যান প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ৫ আগস্টের পরে সরকারের কাছে পুঁজিবাজার নিয়ে যেরকম প্রত‍্যাশা ছিল, সেরকম সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে পুঁজিবাজারের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

মতবিনিময় সভায় ক‍্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি এম এম গোলাম সামদানি ভুঁইয়া বলেন, বর্তমান কমিশন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর, এমনটি দাবি ও প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু, বিএসইসিতে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আছেন। এছাড়া, কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। তাদের মধ‍্যে একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বরং এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পরামর্শে কাজ করে বর্তমান কমিশন।

দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক ও সিএমজেফের সাবেক সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, নিরীক্ষকদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। কারণ, তারা জেনে-বুঝে ভুয়া আর্থিক হিসাব সঠিক বলে সত‍্যায়িত করে। এ সমস‍্যা নিয়ে শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। পুঁজিবাজারের আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোম্পানি সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য আইন করা দরকার। শুধু ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেখে আর এফআরসি বা অডিট ফার্রমের ওপর নির্ভর করে আইপিওর অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার ও সিএমজেফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। বিএসইসিতে নতুন কমিশন দায়িত্ব নিলে ডিবিএসহ সবাই প্রশংসা করে। আর বিদায় নিলে সমালোচনা করে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমালোচনার কাজ করলে, ক্ষমতায় থাকাকালীনই কমিশনের সমালোচনা করতে হবে। তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ‍্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের যোগ্যতা শূন্য। সাম্প্রতিক সময়ে তারা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাই তা প্রমাণ করে।

মতবিনিময় সভায় অর্থসূচকের সম্পাদক ও সিএমজেফের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান, দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার আনোয়ার ইব্রাহিম, প্রথম আলোর বিজনেস এডিটর সুজয় মহাজন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেস প্রতিনিধি দৌলত আক্তার মালা, দ্য ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধাসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।