দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: এস আলম গ্রুপের কাছে আটকে থাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের বন্ধকি সম্পদ নিলামে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে জনতা ব্যাংক সোমবার গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

 

কোম্পানির কাছে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গাজীপুর ও চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ১ হাজার ৮৬০ শতাংশ জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রয়েছে, যার বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা হতে পারে। নিলাম করলে সম্পত্তির মূল্য আরও কম পাওয়া যেতে পারে। ২০ নভেম্বর সম্পদের নিলাম হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের খেলাপি ঋণের চেয়ে বন্ধকি সম্পদ ৫ দশমিক ১৭ ভাগ কম। অর্থাৎ ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদ বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৩৫৮ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব। বাকি ১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা ঋণের কোনো জামানত নেই। জামানত বিক্রি করেও এসব ঋণ আদায় হবে না। ফলে বাধ্য হয়ে ঋণ আদায়ে এস আলম গ্রুপের অন্য সম্পদে হাত দিতে হবে ব্যাংকটিকে। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ ও আইনগতভাবে জটিল প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় ঋণ আদায় সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ, এস আলম গ্রুপের অন্যান্য সম্পদ বিভিন্ন ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছে। ফলে ওইসব সম্পদ অন্য ব্যাংকগুলোর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অধিকার রয়েছে। জনতা ব্যাংক এসব সম্পদে থার্ড পার্টি হিসাবে আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ অন্য ব্যাংক তাদের ঋণের টাকা আদায় করার পর সম্পদ অবশিষ্ট থাকলে তা বিক্রি করে জনতা ব্যাংকের পক্ষে ঋণ আদায় করা সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্য ব্যাংকের দেনা শোধ করে সম্পদ অবশিষ্ট থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, এস আলম গ্রুপের দেশে সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জনতা ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। বিশেষ আমদানির বিপরীতে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছিল। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ না করায় এসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। ঋণ পরিশোধ বা নবায়নের বিষয়ে গ্রাহকের পক্ষ থেকে ব্যাংকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হচ্ছে না। এ কারণে ব্যাংকের কাছে জামানত হিসাবে বন্ধক থাকা গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের সমুদয় সম্পত্তি নিলামে তুলেছে জনতা ব্যাংক।

এছাড়া এস আলম গ্রুপের ন্যাশনাল ব্যাংকে থাকা ঋণও ইতোমধ্যে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারাও ওইসব ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির অনুসন্ধান করছে। সেগুলো থেকেও ঋণের সামান্য কিছু অংশ আদায় করা সম্ভব হবে। ন্যাশনাল ব্যাংক থেকেও এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর বেশির ভাগই নিয়েছে বেনামে। এসব ঋণ আদায়ে ব্যাংক অচিরেই উদ্যোগ নেবে। ব্যাংকটি এখন এস আলমের দায় নিরূপণে বিশেষ অডিট করছে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ আর দেশে ফেরেননি। তিনি আগে থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের আমলে তিনি ২০১৭ সাল থেকে সরকারের সহযোগিতায় ব্যাংক দখল শুরু করেন। দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকসহ নয়টি ব্যাংক দখল করেন তিনি। ওইসব ব্যাংক থেকে তার মোট ঋণের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণের বড় অংশই তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। যে কারণে ব্যাংকগুলো এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। টাকা পাচারের কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সরকারের একাধিক সংস্থা।