দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:  বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশী নেতা মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই সম্প্রতি পাবলিক সার্ভিসে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। ডেনমার্কের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুল অফ স্ক্যান্ডিনেভিয়া (আইবিএসএস) এবং যুক্তরাষ্ট্রের এডুমাইন্ডস লার্নিং যৌথভাবে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে। এই ডিগ্রি শুধুমাত্র তার কর্মজীবনে একটি অনন্য অর্জন হিসেবেই নয় বরং তা ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের সমাজসেবার ক্ষেত্রে তার বহুমুখী অবদানের একটি মূল্যবান স্বীকৃতি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

 

১৯৬২ সালে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন। শৈশব থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলিতে তিনি ছিলেন অনন্য। ১৯৭১ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় অর্থ সংগ্রহ ও খাদ্য সরবরাহের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পর পরই তিনি হয়ে ওঠেন স্থানীয় সমাজ ও তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন ১৯৮৫ সালে তার কর্মজীবন শুরু করেন বাংলাদেশের আইএফআইসি ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। ১৯৯৩ সালে বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশী কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং কমিউনিটির উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখতে থাকেন। ১৯৯৬ সালে আস্টনে তিনি একটি মাল্টি-পারপাস সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এবং এর জন্য ২.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল সংগ্রহ করেন। তার এই উদ্যোগ স্থানীয় কমিউনিটির জন্য কল্যাণের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৯৭ সালে বার্মিংহামের লর্ড মেয়রের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরে সহায়তা করেন, যেখানে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তার উদ্যোগে দুই দেশের মধ্যে শহর টুইনিং প্রোগ্রাম চালু হয়, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে।

মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই ২০১২ সালে কমিউনিটি কোহেসন ও পুনর্গঠনে তার অমূল্য অবদানের জন্য রাণীর সম্মাননা তালিকায় এমবিই উপাধি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ২০১৮ সালে বাকিংহাম প্যালেসে রাণীর সাথে এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন রাজ পরিবারের সদস্যদের সাথেও একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। এমবিই উপাধি গ্রহণকালে রাজা চার্লসের সাথে তার সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় সিলেট ভ্রমণের কথা উঠে আসে, যা তার জন্য ছিল অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত।

বর্তমানে মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন নিউ হোপ গ্লোবাল এবং নিউ হোপ এডুকেশন (সিআইসি) এর চেয়ারম্যান এবং সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে এই সংস্থাগুলি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী ও অন্যান্য এথনিক মাইনরিটি কমিউনিটির জন্য শিক্ষা ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে তিনি আরও বৃহৎ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে তার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির উন্নয়নে মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই’র এই অসামান্য অবদান নিঃসন্দেহে প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।