মামলার ভার আরও কমেছে তারেক রহমানের
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে অন্তত ৮৪টি মামলা দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সেসব মামলার জাল থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হচ্ছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
তবে এখনো প্রায় ৪০টির মতো মামলা রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তার আইনজীবীর অভিমত, প্রচলিত আইন, বিধিবিধান এবং সংবিধান মতে প্রত্যেকটা মামলা নিষ্পত্তির জন্য তারা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, মামলা-মোকদ্দমা শেষ হলে তারেক রহমান দেশে চলে আসবেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই থেকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।
আওয়ামী লীগের আমলে বিচার প্রক্রিয়ায় ৮৪ মামলার মধ্যে পাঁচটিটিতে দণ্ড হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। এই পর্যন্ত খারিজ, খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন অন্তত ৪২ মামলায়।
সর্বশেষ খালাস পান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায়। এছাড়া সিলেটে দুই মামলা এবং পিরোজপুরে এক মামলা খারিজ করা হয়। এছাড়া অর্থপাচারের অভিযোগের মামলায় তাকে দেওয়া সাত বছরের দণ্ড স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
এ বিষয়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমানের কণ্ঠরোধ করার জন্য, বিএনপিকে তিনি যেন নেতৃত্ব দিতে না পারেন, সংগঠিত করতে না পারেন, ফ্যাসিবাদকে যেন উৎখাত করতে না পারেন, সে জন্য শেখ হাসিনা অনেক মামলা দিয়েছেন। আমাদের হিসাব মতো প্রায় ৮৪টি মামলা। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় খারিজ-বাতিল হয়েছে। বাকি যেগুলো আছে সে বিষয়ে তারেক রহমান আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করতে চান। আইনজীবীরা প্রচলিত আইন, বিধিবিধান এবং সংবিধান মতে প্রত্যেকটা মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে লন্ডন থেকে ফেরার দিন সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওনার যখন সুযোগ হবে অর্থাৎ মামলা-মোকদ্দমাগুলো শেষ হলে চলে আসবেন।
এখনো যেসব মামলায় সাজা আছে
মানি লন্ডারিং মামলা
বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করে। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গিয়াস উদ্দিন মামুনকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন।
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুদকের আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে খালেদা জিয়াকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন।
জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা
জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগের মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে নয় বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন।
মানহানির মামলা
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দেন তারেক। সেই খবর প্রকাশিত হয় দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে।
ওই বক্তব্যে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে সে সময় নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস নড়াইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এই মামলায় নড়াইলের একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।