দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ। সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ার পাশাপাশি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ছুটছেন বিভিন্ন হাসপাতালে, যার অধিকাংশই শিশু।

 

চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বিভিন্ন কারণে শীতজনিত রোগব্যাধির আগমন বেশি ঘটে।

ঠাণ্ডাজনিত রোগের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (ব্রঙ্কিওলাইটিস), সাইনোসাইটিস, বাত, আর্থরাইটিস ও চামড়ার শুষ্কতা অন্যতম।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছরে তীব্র শীতের কারণে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। যেসব রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসছে তাদের বেশিরভাগই শিশু। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে গেছে।

এদিকে শীতের মাঝেই চার বিভাগে ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা দিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে আগামী শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে সারা দেশে বৃষ্টির আভাস রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড় না হলেও এর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি বেশি হবে। আগামী ২০ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিন বৃষ্টি থাকবে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি বৃষ্টি হবে। ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটেও বৃষ্টি হবে।

সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টির পর শীত ও কুয়াশা দুটিই তীব্রভাবে বাড়তে পারে। ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে সবাইকে বিশেষ করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের শীত থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ও সতর্কতার প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন ডাক্তার জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় শিশুরা অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছর এমন চিত্র দেখা যায়। এসব রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষায় শিশুকে গরম পোশাক পরিধান করাতে হবে। বাসার বাইরে গেলে অবশ্যই শীত প্রতিরোধী পোশাক পরতে হবে।

বাচ্চাদের শীতজনিত কারণে কী ধরনের রোগ হচ্ছে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শীতে বাচ্চাদের ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর এ রোগগুলো বাড়ছে। এর পরের স্তরে নিউমোনিয়া,হাঁপানি ইত্যাদি রোগ বাড়ছে। শীত যত বাড়ছে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। এর বাইরেও শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের চর্মরোগ, অ্যালার্জিজনিত রোগীও সংখ্যা প্রচুর পাচ্ছি।

শীতকালে বাচ্চাদের রোগ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা আলামীন হোসেন বলেন, শীতকালে বাচ্চাদের ভাইরাল ফ্লু, সর্দি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া এসব রোগ অনেক বেশি হচ্ছে। ঠাণ্ডা ও হাঁপানি রোগী বেড়ে যাচ্ছে।

কী পরিমাণ বাচ্চা চিকিৎসা নিতে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য সময়ের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাচ্চা আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসছে। বাচ্চারা শীতকালে ঠাণ্ডাজনিত এসব রোগে আক্রান্ত হলে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো যাবে না। দ্রুত একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এটা বাচ্চাদের জন্য ভালো হবে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, প্রতিবছরই শীতকালে বাচ্চাদের সর্দি, কাশি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ বেড়ে যায়। এ সময় শিশু হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি।

বাচ্চাদের শীতকালে ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষার প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম শর্ত বাচ্চাদের ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না। বাইরে যেতে হলে পর্যাপ্ত গরম কাপড় বাচ্চাদের পরাতে হবে। পাশাপাশি ঘরে থাকলেও গরম কাপড় পরতে হবে। রাতে দীর্ঘক্ষণ যদি বাইরে থাকতে হয়, তাহলে মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে, যেন মাথায় কুয়াশা না লাগে। শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ঠাণ্ডা অনুসারে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা দরকার।