সোহেল রানা, দিরিপোর্ট : মাত্র ছয় মাস বয়সে পোলিওতে ডান পা হারিয়েছেন। এবার হরতালের সহিংসতা; শরীরের ১৯ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের বেডে। ডাক্তার বলছে আশংকাজনক নয় তার অবস্থা। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুল মান্নান (৩৫) সুস্থ হয়ে দ্রুত কাজে ফিরতে চান। বেঁচে থাকতে চান স্ত্রী-সন্তান ও পরিজনদের নিয়ে।

রাজধানীর রায়েরবাগ শনির আখড়ায় মঙ্গলবার দুপুরে দুর্বৃত্তরা বাসের পেছনে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। এ ঘটনায় আহত হন ইডেন কলেজছাত্রীসহ নয়জন। এর মধ্যে হতভাগা আব্দুল মান্নানও রয়েছেন। বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দিরিপোর্ট২৪ এর সঙ্গে কথা হয় তার।

মান্নান জানান, ছয় মাস বয়সে পোলিওতে ডান পা হারায়(পঙ্গু)। তখন থেকেই পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে আমি মূল্যহীন।

পড়াশোনার জন্য ঝালকাঠির নলছিটির আবাসিক এনএস কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হই। ১৯৯৬ সালে প্রথম বিভাগে দাখিল পাশ করি। ১৯৯৮ সালেও প্রথম বিভাগে আলিম পাশ করি। একই মাদ্রাসায় প্রথম বিভাগে ফাজিল পাশ করি ২০০০ সালে। পরবর্তীতে ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসায় কামিলে ভর্তি হই এবং প্রথম বিভাগে পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি বিভাগে ভর্তি হই। ২০০৮ সালে মাস্টার্স শেষ করি।

তিনি আরো জানান, ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার। তবে সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।

পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করি। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য আমাকে বাদ দেওয়া হতো- আক্ষেপ করে জানান মান্নান। শরীর কী সব? মেধার কী কোন মূল্য নেই?

এরই মধ্যে সাথী আক্তারের সঙ্গে সংসার শুরু করেন মান্নান। এক বছর পর তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসে। বর্তমানে তার স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

মান্নান জানান, অনেক চেষ্টার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সেলস এ্যাসিসটেন্ট হিসেবে যোগ দেই। ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় কাজে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হই।

বের হওয়ার আগে আমার তিন বছরের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম পেছন থেকে বলে, ‘বাবা আজ তাড়াতাড়ি বাসায় এসো। আমার জন্য আপেল কিনে এনো। অফিস থেকে স্ত্রীকে জানিয়ে দেই, দুপুরের খাবার একসঙ্গে খাবো।’

বাবা ছেলের কথা রাখতে অফিস থেকে বের হন দুপুর দেড়টায়। কিন্তু নিয়তির পরিহাস, বাসে উঠেও সুস্থ-শরীরে বাসায় ফিরতে পারলেন না।

রায়েরবাগের শনির আখড়ায় বাসটি পৌঁছামাত্রই দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। ঘটনাস্থলেই নয়জন দগ্ধ হন। তাদের নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এখন তারা সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বার্ন ইউনিটের পরিচালক সামন্ত লাল সেন জানান, হরতালের সহিংসতায় মঙ্গলবার নয়জন অগ্নিদগ্ধ হন। এদের মধ্যে আবদুল মান্নান রয়েছেন। তার অবস্থা আশংকাজনক নয়। শরীরের ১৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে।

(দিরিপোর্ট/এসআর/এমএইচও/এমএআর/নভেম্বর ১৩, ২০১৩)