হাসান আরিফ, দ্য রিপোর্ট: ব্যাংকের অসহযোগীতায় কারণে কাঁচামালের অভাব দেখা দিয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার রিফাইনারি মিলে। ফলে প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন ব্যাংকের সহযোগিতা ও সরকারের সহায়তা পেলে রোজার আগে সুগার মিল চালু করার উদ্যোগ নিবেন কর্মকর্তারা। যাতে রোজায় দেশের চিনি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। সম্প্রতি নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত দেশবন্ধু গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব কথা জানান।

দেশবন্ধু গ্রুপের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি দেশের চিনির মোট চাহিদার ১৫ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে। মূলত দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার রিফাইনারিতে প্রতি বছর কম-বেশি তিন লাখ টন চিনি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তাই আসন্ন রোজায় চিনি সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকের এলসি (ঋণপত্র) জটিলতা নিরসন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

তারা জানান, ব্যাংকিং জটিলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে অপরিশোধিত বা পরিশোধিত চিনি আমদানি করতে না পারায় সুগার রিফাইনারি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাজারে চিনির ঘাটতির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে। একই সঙ্গে বেকার হচ্ছে হাজারও শ্রমিক।

নরসিংদীর পলাশে দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার মিল ছাড়াও বোতলজাত পানি, বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিং, কোল্ড ড্রিংসের বোতল উৎপাদন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, কারখানার যেসব ইউনিট চালু আছে তার উৎপাদন ক্ষমতা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। আগে যেখানে ১০ টন পণ্য উৎপাদন হতো এখন কাঁচামালের অভাবে সেখানে ৩ থেকে ৪ টন উৎপাদন হচ্ছে। সুগার রিফাইনারি বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কোল্ড ড্রিংকস উৎপাদনও ব্যহত হচ্ছে। আর প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানি করতে না পেরে সেটাও ধুকে ধুকে চলছে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, দেশবন্ধু সুগার মিলস ২০১৭ সাল থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ২০১৯ সাল থেকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ২০২৩ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ২০১৭ সাল থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত দেশবন্ধু গ্রুপের সাতটি কোম্পানির অনুকূলে মোট তিন হাজার ৯৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এর বিপরীতে পরিশোধ করেছে তিন হাজার ৬০৫ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রুপের পাঁচটি কোম্পানির অনুকূলে মোট এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ঋণ নেয়; দেশবন্ধু গ্রুপ পরিশোধ করে এক হাজার ১৪৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একইভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৫৩ কোটি ৭০ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে; এর মধ্যে শোধ করেছে ৩৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

দেশবন্ধু গ্রুপের দাবি, তিনটি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণের বেশিরভাগ পরিশোধ করা হলেও কিছু অর্থ বকেয়া আছে, যে কারণে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে পণ্যের কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে পারছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে খেলাপি হওয়া ঋণগুলো পুনঃতফসিল করতে চাইলেও ব্যাংক সে সুযোগ দিচ্ছে না। এছাড়া তাদের সাপ্লাইয়ার ক্রেডিট কন্ট্রাক্টের আওতায়ও কাঁচামাল আমদানি করতে সহায়তা করছে না ব্যাংকগুলো। তবে তাদের আউটস্ট্যান্ডিং কত তার কোন তথ্য দেয়নি ব্যাংক কর্মকর্তারা।

এদিকে দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্রুপ সিএফও বশির আহমেদ বলেন, তৎকালীন সরকার উচ্চমূল্যে চিনি আমদানি করে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করেছিল। তখন কোম্পানির ৩৭৮ কোটি টাকা লোকসান হয়। এই লোকসানের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার তা দেয়নি। যার কারণে গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পরে।

অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ও পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এখন ব্যাংক কোন গ্রাহকের সঙ্গে ব্যবসা করবে এটা তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে নিয়মনীতি মানার পরও যদি কারও এলসি খোলার সমস্যা হয়, এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি দেখবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এইটাই দেশবন্ধু গ্রুপ কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা।