কিছু বিষয়ে সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছে না: ফখরুল
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কিছু বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) শহীদ আসাদের ৫৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে এসভার আয়োজন করে শহীদ আসাদ পরিষদ।
সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে নির্বাচনের সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার আছে। আমি এই কথাটা বলেছি কারণ, আমরা দেখছি কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছেনা। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। দেশে যে সংকট আছে, তা থেকে মুক্ত করার জন্য দায়িত্ব পালন করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখনো দেখছি, আমলাতন্ত্র আগে যে অবস্থায় ছিল এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সব প্রশাসনে একইভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কোনো ধরনের রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া একদম বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুল-কলেজে সেভাবে লেখাপড়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এগুলো অতীত থেকেই এসেছে। সেগুলো পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়। সেজন্যই আমরা বলছি, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচন দ্রুত হলে যে সরকার আসবে, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট যেগুলো থাকবে সে কমিটমেন্টগুলো পালন করার জন্য অবশ্যই দায়বদ্ধ থাকবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সাধারণ মানুষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়। সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তারা তাদের অধিকার ফেরত চান। তারা যেন তাদের ভোটের অধিকারটা পান, কথা বলার অধিকার পান এবং তাদের সন্তানরা যাতে লেখাপড়া শিখতে পারে। তারা এমন একটি সমাজ চায়, যেই সমাজে দুর্নীতি, অনিয়ম, অন্যায় থাকবে না। সেই সমাজে মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার থাকবে, সেই ধরনের একটি সমাজ তারা চায়। কিন্তু সব সময় আমরা সেটি পায় না।
ফখরুল বলেন, নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কারণআমি বিশ্বাস করি, যে নির্বাচন থেকে আমরা প্রায় ১৫ বছর বঞ্চিত, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার একটি সুযোগ পাবে। এখন এখানে জোর করে যদি সেই বিষয়টাকে বিতর্কিত করে ফেলা হয়, তাহলে জনগণ আবার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। আমাদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে সেখানে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকবে। তখন জনগণ তাদের চাহিদা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। সেটার জন্যই আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। সেই কারণেই বর্তমান অন্তর্বর্তীসরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। স্বাভাবিকভাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখন সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই ধরনের ব্যবস্থায় থেকে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না, আমাদের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম, কর্মসূচি আছে। সেই কর্মসূচিগুলো তারা চালিয়েযেতে চায়। কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত, একটি নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচন শুধু একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, একটি গণতান্ত্রিক পথ সৃষ্টি করার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন।
শহীদ আসাদকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলবলেন, ঊনসত্তরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমরা যারা জড়িত ছিলাম, তাদের কাছে শহীদ আসাদ অত্যন্ত ভালোবাসার নাম। আমরা যে সংগ্রাম-আন্দোলন করেছি, সেই সংগ্রাম-আন্দোলনে আসাদ একটি অনুপ্রেরণার নাম। শহীদ আসাদ আমাদের ইতিহাসের একটি অবশ্যম্ভাবী একটি নাম। যতই পাঠ্যপুস্তকে নাম না থাকুক বা কেউ স্মরণ না করুক, শহীদ আসাদকে ইতিহাস থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আসাদ অমর হয়ে থাকবেন।
তিনি বলেন, চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে আমরা একজন ফ্যাসিস্ট শাসককে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছি। ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আজকে শহীদ আসাদ খুব প্রাসঙ্গিক। আমরা ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছি, সবশেষে আমরা বিজয় অর্জন একটি করেছি। যারা এই বিজয় আনতে প্রাণ দিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে যাতে আমরা তাদের স্বপ্নগুলো যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
শহীদ আসাদ পরিষদের সভাপতি ড. মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।