হাসিনা যেন ভারত থেকে উসকানিমূলক মন্তব্য না করেন, চায় ঢাকা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জুলাই অভ্যুত্থানকালে প্রায় দুই হাজার মানুষকে হত্যার জন্য কোনো প্রকার অনুশোচনা ও ভুল স্বীকার করছেন না জনরোষে ভারতে পালিয়ে যাওয়া পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপরন্তু আন্দোলনকারীদেরই বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে দোষারোপ করে আসছেন তিনি।
তার এ ধরনের মন্তব্য বাংলাদেশে ক্ষোভ উসকে দিচ্ছে বলে তাকে চুপ রাখার জন্য ভারতের কাছে বারবার বলে আসছে ঢাকা। সেই একই আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ভারত থেকে হাসিনা যেন কোনো ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য না করেন, সেটাই চাওয়া আমাদের।
এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলছিলেন তৌহিদ হোসেন। মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর উপদেষ্টার এ সাক্ষাৎকার নেয় দ্য হিন্দু।
তাকে প্রশ্ন করা হয়, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত ১৫ বছরে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্কের ধারায় অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে উভয় পক্ষকে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছু সময় লাগতে পারে, এবং এর ফলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে ছয় মাস পর এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে।
ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করা হয়- সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ভারত ঠিক কী করতে পারে বলে আপনি আশা করছেন?
জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে, এবং বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করেছে যাতে তিনি দেশে ফিরে এসে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। যতক্ষণ না ভারত সরকার তাকে ফিরিয়ে দেয়, আমরা আশা করব যে তারা অন্তত (হাসিনার ওপর) কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, যাতে তিনি উসকানিমূলক ও মিথ্যা মন্তব্য না করেন, যা মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, শেখ হাসিনা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন এবং মানুষ তার কর্মকাণ্ড নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ। তাই আমরা চাই না যে তিনি (বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হাসিনার পৈতৃক বাড়িতে বিক্ষুব্ধদের হামলা প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেনের কাছে দ্য হিন্দু জানতে চায়, হাসিনার বক্তব্যের কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে একটি ‘মবকে’ হামলা চালাতে দেওয়া হয়েছে, আপনি এটাকে কীভাবে ন্যায্যতা দেবেন?
উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, উত্তেজিত জনতা কিছু করতে পারে, কিন্তু সরকার এসব সমর্থন করে না। তিনি এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
উপদেষ্টা কাছে জানতে চাওয়া হয়- হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত শুধু একটি ‘ভার্বাল নোট’ পাঠিয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের অনুরোধ কবে জানানো হবে?
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, এবং এর আওতায় ইতোমধ্যে অনেক আসামিকে বাংলাদেশ ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা আশা করি ভারত শেখ হাসিনাকেও ফিরিয়ে দেবে যাতে তিনি বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। তবে এই প্রক্রিয়াটি আইনি পথেই এগোবে, এবং এতে সময় লাগতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই তিনি ভারতে থাকাকালে যেন উসকানিমূলক মন্তব্য না করেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেন।