নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে: ড. ইউনূস

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নির্বাচন ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচনী ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময়ের বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। কথা বলেছেন দেশের রাজনীতিতে বর্তমানে কোণঠাসা হয়ে পড়া আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কামব্যাক ইস্যু নিয়েও।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বিবিসি। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে তিনি ‘চমকে’ গিয়েছিলেন। তার কথায়, ‘আমার কোনো ধারণা ছিল না যে, আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আগে কখনও সরকার যন্ত্র পরিচালনা করিনি এবং এরপরও পরিস্থিতি বুঝে ঠিকভাবে কাজ করতে হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, এটা স্থির হয়ে গেলে আমরা অন্যান্য বিষয় সংগঠিত করতে শুরু করি। যার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনীতি ঠিক করা দেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল।
জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে বার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর ও আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা নির্ভর করছে তার সরকার কত দ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে আনতে পারে তার ওপর। বিষয়টি সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।
দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়া আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কামব্যাক ইস্যু নিয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন অবস্থান করছেন ভারতে। এদিকে তার দলও রাজনীতির মাঠে ছন্নছাড়া। এ ব্যাপারে ড. ইউনূস বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না। কারা নির্বাচনে অংশ নেবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।
দেশের অর্থনীতির সংকট নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এরপর অর্থনীতি। (আগের সরকারের রেখে যাওয়া) এটি এক ছিন্নভিন্ন অর্থনীতি, বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটা এমন কিছু যেন ১৬ বছর ধরে ভয়ানক টর্নেডো হয়েছে এবং আমরা এখন টুকরোগুলো তুলে নেয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের সাত মাস পেরিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রায়ই নেতিবাচক খবর চাউর হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেটার একটি আপেক্ষিক শব্দ। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনা করেন তবে এটি (আইনশৃঙ্খলা) ঠিক আছে। এখন যা ঘটছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা বা ভিন্ন কিছু নয়
বাংলাদেশের বর্তমান দুর্ভোগের জন্য আগের সরকারকে দায়ী করেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, আমি বলছি না যে, এই ধরনের ঘটনাগুলো হওয়া উচিত। আমি বলছি যে, আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই যা আমরা হঠাৎ করে তৈরি করেছি। এই অবস্থা হচ্ছে দেশের ধারাবাহিকতা যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, এমন একটি দেশ যেখানে এসব বহু বছর ধরে চলে আসছে।
বর্তমানে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ভাষণ দেবেন, এমন খবরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের সদস্যদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেয়া হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে আওয়ামী লীগের সদস্যদের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, দেশে আদালত আছে, আইন আছে, থানা আছে, তারা গিয়ে অভিযোগ করতে পারে, তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে।
সাক্ষাৎকারে বিদেশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং কার্যকরভাবে মার্কিন এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নকৃত প্রায় সব কর্মসূচি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো দেশে কেমন প্রভাব ফেলবে— এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। এটি ভালোই হয়েছে। কারণ, তারা এমন কিছু করছে যা আমরাই করতে চেয়েছিলাম, যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং এর মতো আরও জিনিস, যা আমরা কখনোই ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কীভাবে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যখন এটা হবে, আমরা তা পূরণ করব। দেশটি বাংলাদেশের সরকারি উন্নয়ন সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী।