দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : শ্রীনাথ বলেছেন, ‘শচিনের যে দিকটা আমার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগত- প্রশংসার ব্যাপারে সে খুব কৃপণ। খুব সহজেই সে তোমার প্রশংসা করবে না। তার কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া খুব কঠিন। সে তোমার সম্পর্কে কি বলেছে একান্তই তা যদি জানতে চাও- এটা হতে পারে অন্যের কাছ থেকে।’

‘তারা হয়তো তোমার কাছে এসে বলবে- শোন শচিন আজ আমাদের বলেছে তুমি ভালো ব্যাটিং করেছ কিংবা ভালো বোলিং করেছ। এতটুকু প্রশসাই তুমি পেতে পার।’

শ্রীনাথ আরো বলেছেন, ‘তার অধিনায়কত্বের এটাও একটা ভালো দিক। প্রকৃত অর্থেই এ কারণে আমাদের অনেকের খেলার মানের উন্নতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, এ কথায়- সকল কন্ডিশনেই শচিন সেরা ছিলেন এবং সকল প্রকার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই তার পর্যবেক্ষণ ছিল অসাধারণ।

শ্রীনাথ জানালেন, ‘তার পর্যবেক্ষণ শতকরা ৯০ ভাগ সময়েই সঠিক ছিল। একটা ম্যাচের কথা আমার মনে আছে- অন্য প্রান্তে আমি ব্যাট করছিলাম। শচিনকে নিয়েই বোলারের পরিকল্পনা ছিল এবং কিন্তু পরিকল্পনা আমাকে নিয়েও ছিল। আমি তার কাছে যেতাম, তাকে লক্ষ্য করতাম এবং সে আমাকে বলে ছিল- বোলার তোমার প্রতি কঠোর হতে পারে.... একটা গুড লেন্থ ডেলিভারি দিতে পারে এবং ৯০ ভাগ সময় তার পর্যবেক্ষণ সঠিক ছিল।

‘১৯৯৬ সালে কেপ টাউনে শচিন ও আজহারুদ্দিন সেঞ্চুরি পেলেন। আমি অনেক ওভার বোলিং করেছি এবং ভেংভটেশ প্রসাদ ইনজুড়িতে পড়লেন। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়িলাম। আমি ব্যাটিং করতে নামলাম, অপর প্রান্তে শচিন ব্যাটং করছিলেন। আমার ডান পায়ের প্রতি দৃষ্টি ছিল লেগ আম্পায়ারের। আমি কি বলছি আপনারা জানেন- কারণ অপর প্রান্তে বোলিং করছিলেন এল্যান ডোনাল্ড।

ম্যাচ শেষে শচিন আমাকে বললেন ‘দেখো শ্রী, আমি এটা পছন্দ করিনা। তুমি স্টাম্প ছেড়ে দৌড়াচ্ছিলে। আমাকে এটা মেনে নিতে হল। তিনি বললেন, দেখ তোমার কাছ থেকে আমার আরো বেশী কমিটমেন্ট দরকার। পরের ম্যাচে আমি ৪৩ রান করলাম। আমি স্টাম্পের সামনে দাঁড়ালাম এবং কিছু বল প্রতিহত করলাম।’

১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরিত্যক্ত ম্যাচের কথাও উল্লেখ করেন শ্রীনাথ। শ্রীলঙ্কার ২৫২ রানের লক্ষ্য ভাড়া করতে গিয়ে ভারত ১২০ রানে ৮ উইকেট হারালে দর্শকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা সে ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ফাইনালে ওঠে। শ্রীনাথ বলেছেন, ‘এ ম্যাচটি আমাদের জন্য দিল অত্যন্ত বেদনার এবং আমরা সকলে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। ম্যাচ শেষে দেখলাম ৪-৫ জন খেলোয়াড় কাঁদছে। সবাই যখন কাঁদছে তখন; আমিও কান্না শুরু করলাম।’

পরক্ষণেই যোগ করেছেন, ‘আমি শচিনকে লক্ষ্য করলাম সে কাঁদছে না। আমি তার কাছে গেলাম এবং সে আমাকে বলল আমি কাঁদতে পারছিনা। আমরা কাঁদব কেন। আমরা খারাপ খেলেছি এবং হেরেছি। এটাই আমাদের শেষ বিশ্বকাপ নয়। কান্নাকাটি আমি পছন্দ করিনা।’

তার মত ব্যক্তির কাছ থেকে মানুষ এটা শিক্ষা নিতে পারে।পাকিস্তানের সাবেক দুই পেসায় ওয়াকার ইউনিস ও শোয়েব আখতার ও টেন্ডুলকারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ওয়াকার বলেছেন, ভারতীয় ব্যাটিং মাস্টার ছিলেন বিশ্বের ‘শীর্ষস্থানে সঠিক ব্যক্তি’ আর শোয়েব আখতার তাকে ‘বিশ্বের সেরা’ হিসেবে অভিহিত করেন। ওয়াকার বলেছেন, ‘ছেলেবেলা (১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিষেক) থেকেই তিনি বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেছেন। সিরিজের ৪টি টেস্টই সবুজ ইউকেটে হয়েছিল এবং সে খুবই ভাল খেলেছিল। উপমহাদেশের বাইরেও সে অনেক রান করেছে। তার পরিসংখ্যানই আমাদের বলে দেয় সে কি করেছে।’

শোয়েব বলেছেন, ‘ক্রিকেটে ইতিহাসটাই তিনি বদলে দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। তাকে আউট করার সময় নিজেকে আমার বড় মনে হতো এবং সে যখন আমাকে বাউন্ডারী কিংবা ওভার বাউন্ডারী মারতে না পারত আমি তখন গর্ববোধ করতাম। তিনি বিশ্বের (ক্রিকেট) নায়ক।’ সূত্র : এএফপি/এপি।

(দিরিপোর্ট/এএস/সিজি/নভেম্বর ১৩, ২০১৩)