"আগের চেয়ে সুস্থবোধ করায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া"

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগের চাইতে অনেক সুস্থবোধ করছেন, সে কারণে তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রথমে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্রতিদিন তার অবস্থা উন্নতি হয়েছে।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমানও আসবেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একদিকে একটি ভালো পরিবেশ, বিশেষ করে পারিবারিক পরিবেশ, একইসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে উন্নত চিকিৎসার কারণে তিনি আল্লাহর অশেষ রহমতে আগের চাইতে অনেক সুস্থবোধ করছেন। সে কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন দেশে ফিরে আসবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ৫ মে বেগম খালেদা জিয়া একটি বিশেষ বিমানে, আমরা যেটা আশা করছিলাম যে বিমানে তিনি গেছেন; অর্থাৎ কাতারের রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরে আসবেন। সময়টা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ এই সময়টা নির্ভর করবে বিভিন্ন দেশের ওপরে। এটা আমরা যখনই নিশ্চিত হব, আমরা আবার গণমাধ্যমের মাধ্যমে সে তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেব।
নেতাকর্মী ও দেশের সাধারণ মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী দেশে ফিরে আসবেন। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে আবেগ আছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত-উজ্জীবিত যে তাদের প্রিয় নেত্রী দেশে ফিরে আসবেন। তাকে অভ্যর্থনা জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, তারা অত্যন্ত শৃঙ্খলা সহকারে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে কোনো যানজট সৃষ্টি না করে নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। আমরা পরামর্শ দিয়েছি এক হাতে জাতীয় পতাকা, আরেক হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে আমরা তাকে অভ্যর্থনা জানাব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের কাছে আহ্বান থাকবে তিনি আসার পরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পথটিতে যেন তারা যাওয়ার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে কাকলি পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যেন তারা অবস্থান নেন। নিচের সড়ক বাদ দিয়ে। আমার বিশ্বাস জনগণ আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন এবং তাদের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এশিয়া মহাদেশের নারী নেত্রীদের মধ্যে যে দুই-একজন সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন গণতন্ত্রের জন্য এবং সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন, কারা নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কখনোই অন্যায়ের কাছে বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত করেননি। ১৯৭১ সালে তার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা করেন তখন তার দুই শিশু পুত্রের হাত ধরে ঢাকায় চলে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, ঢাকায় এসেই তিনি পাক সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দীর্ঘ নয় মাস পাক সেনানিবাসে বন্দি ছিলেন। এই মহীয়সী অকুতোভয় নেত্রী, যিনি স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনোই আপস করেননি, যিনি গণতন্ত্রের প্রশ্ন কখনোই আপস করেননি সেই নেত্রী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার মিথ্যা মামলায় কারাগারে থেকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশের চিকিৎসা করেন। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি যুক্তরাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা নেন। তার মতো এমন ত্যাগ স্বীকার করা নারী নেত্রী চোখে পড়েনি। তিনি আমাদের কাছে শুধু প্রিয়ই নন, তিনি আমাদের বড় সম্পদ। দেশের মানুষের কাছে তাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে, তিনি ছিলেন আমাদের আলোকবর্তিকা। যাকে সামনে রেখে আমরা সবসময় লড়াই সংগ্রাম করি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।