দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়ে সমালোচনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিনিয়োগকারীরা প্রকাশ্যেই তার পদত্যাগ দাবি করছেন। এ পরিস্থিতিতে সোমবার (১৯ মে) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ বৈঠকে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন।

 

সূত্র জানায়, রাশেদ মাকসুদ অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চাইলে তাকে ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব নয়—এমন বক্তব্য সম্বলিত পদত্যাগপত্র অর্থ উপদেষ্টার কাছে জমা দিতে পারেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ আগস্ট রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কমিশনের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরই ১৬ কর্মকর্তা চাকরি হারান, যাদের অনেকেই ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ঘনিষ্ঠ।

তবে কঠোর অবস্থানের পরও পুঁজিবাজারে কোনো স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং চলমান দরপতনে বিনিয়োগকারীরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাজার থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হাওয়া হয়ে গেছে বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে রোববার (১৮ মে) রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, যেখানে ‘কফিন মিছিল’ ও গায়েবানা জানাজার মতো ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিক্ষোভের আয়োজক বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বিনিয়োগকারীরা মতিঝিল থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন। তারা জানান, বাজার ধসে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন, আত্মহত্যার পথে চলে গেছেন কেউ কেউ।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান পুঁজিবাজার সম্পর্কে অজ্ঞ ও বাস্তবতাবিমুখ। তার কর্মকাণ্ডে আস্থা হারিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এক বৈঠকে অংশীজনদের হুমকি দিয়েছেন যাতে কেউ তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে না নামে এবং নেতিবাচক সংবাদ গণমাধ্যমে না আসে।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের ‘পুঁজিবাজার রক্ষা করা আমাদের কাজ নয়’ মন্তব্য নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, দেশের অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ খাত রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে।

আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে বাজারের এই ধস থামাতে না পারলে আরও বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, বাধ্য হয়েই কফিন নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। এবার যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে আন্দোলনের মাত্রা আরও বাড়বে। তাদের একটাই দাবি—বাজার বাঁচাতে হলে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।