দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নানা সংকট আর চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূণৃ হলো। অর্থনীতির চরম দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থা থেকে কিচুটা উন্নতি হয়েছে। রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কমেছে অর্থপাচার ও লুটপাট। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরে অর্থনৈতিক অবস্থার অগ্রগতি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ছিলো জিনিসপত্রের চড়া দাম, বেকারত্বের নিষ্পেষণ। আর পাচার, লুটপাটে ক্ষত-বিক্ষত অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় রচিত হয় নতুন ইতিহাস। কিন্তু, গেলো এক বছরে সেসব প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে অন্তবর্তী সরকার?

তথ্য-উপাত্তের বিচারে অবশ্য এই প্রশ্নের জবাব বেশ খানিকটা স্বস্তির। কেননা, উত্তরাধিকারসূত্রে ভঙ্গুর এক অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করা অন্তর্বর্তী সরকার, সক্ষম হয়েছে রক্তক্ষরণ থামাতে। বিশেষ করে, চড়া মূল্যস্ফীতির নির্মম বাস্তবতাকে, নামিয়ে আনা গেছে ৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে। তারপরও, আসলে কি ভালো আছেন সাধারণ মানুষ? এমন প্রশ্ন ছিল অর্থ উপদেষ্টার কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, তেলের দাম, গ্যাসের দাম বেড়েছে? আর তো বাড়ে নাই। যা বাড়ার তা তো আগেই বেড়ে গিয়েছিল। ইনফেকশনের বড় একটা একাউন্ট ৬০ শতাংশ একাউন্ট কিন্তু এক্সটার্নাল সোর্স থেকে হয়েছে। এই ৬০ শতাংশ নিউট্রালাইজড করতে পেরেছি।

শুধু মূল্যস্ফীতি নয়, দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি দায়দেনার চাপে পিষ্ট বাংলাদেশকে, ভারমুক্ত করতে পেরেছে নতুন পরিষদ। যেমন, শোধ করা হয়েছে, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, সার ও পরিবহনের ৩ বিলিয়ন ডলারের দায়। সাড়ে চার বিলিয়ন যোগ হয়ে মজুদ উঠেছে ২৫ এর কাছাকাছি। রেকর্ড ৩০ বিলিয়নের মাইলফলক ছাড়িয়েছে প্রবাসী আয়। আর নানা সঙ্কটেও ভালো প্রবৃদ্ধি রপ্তানি খাতে। কমেছে অর্থপাচার, লুটপাট। স্বস্তি ফিরেছে ব্যাংকখাতেও। অবশ্য, এতে আত্মতুষ্ট না হয়ে বরং, একটা টেকসই ব্যবস্থা গড়ার আপ্রাণ চেষ্টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাবা আমাকে দেউলিয়া করে দিয়ে গেছে সন্তান হিসেবে তো আমাকে এটা ঘুরাতে হবে। আমি সেই ঘুরানোর চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরকে যাতে স্ট্যাবিলাইজড টেকসইভাবে সামনের দিকে নেয়া যায় সেজন্য অনেকগুলো রিফর্ম হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিশালভাবে বড় পরিবর্তন দেখতে পাব। কিন্তু আমাদের পরবর্তী সরকারকে সুযোগও দিতে হবে কাজগুলো করার জন্য।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সার্বিকভাবে আমি মনে করি যে, আমরা একেবারে খাদের কিনারা থেকে চলে আসছি খাদে পড়ার আর সম্ভাবনা নেই। এখন আমরা অনেকটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চলে আসছি।

জুলাই অভ্যুত্থানের বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, বৈষম্য কমানো এবং কল্যাণমুখী ব্যবস্থা প্রণয়ন। এই এক বছরে যে সেদিকে খুব একটা এগুতে পারেনি অন্তবর্তী সরকার, তা অকপটে স্বীকার করলেন এই দুই শীর্ষ ব্যক্তি।