সংবিধান মেনেই মন্ত্রীদের পদত্যাগ : সুরঞ্জিত
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমার ঘটনাটি ‘স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা’ বললেও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বললেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, ‘সংবিধান মেনেই এই প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে।’
দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনও সোমবার অন্যান্য মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাদের পদত্যাগের পর এ নিয়ে গত দুদিন নানা বিতর্ক চললেও নিশ্চুপ ছিলেন তিনি। অবশেষে বুধবার আকস্মিক মুখ খুললেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র এ সংসদ সদস্য।
সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া সাংবিধানিকভাবেই হয়েছে। যেটা হয়েছে সেটা শতভাগ সাংবিধানিক, লিগ্যাল, লেজিটিমেট।’
সংবিধানের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৫৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চাইলে মন্ত্রীদের পদত্যাগের অনুরোধ করতে পারেন। মন্ত্রীরা এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ রক্ষা করেছেন।’
সুরঞ্জিত দাবি করেন, ‘এই পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণের পর গেজেট জারি হলেই তা কার্যকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে পদত্যাগপত্র দেওয়া হয়েছে তা তিনি ড্রয়ারে রাখতে পারেন, আবার রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। রাষ্ট্রপতি তখন স্বাক্ষর করবেন, গেজেট হবে, ডিগেজেট হবে।’
‘রাষ্ট্রপতি সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করবেন, এটাও কিতাবে (সংবিধান) বলা আছে’ যোগ করেন তিনি।
সংবিধানের ৫৮ (৪) অনুচ্ছেদ তুলে ধরে সুরঞ্জিত বলেন, ‘এরপরও সংবিধানে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উত্তরসূরী দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি পদে বহাল থাকবেন। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন।’
এর আগে মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী এটি পদত্যাগপত্র নয়, যা হয়েছে তা একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’
তিনি দাবি করেন, ‘মন্ত্রীরা যা জমা দিয়েছেন, তা আদতে পদত্যাগপত্র নয়, কেননা তা রাষ্ট্রপতি বরাবর দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য পদত্যাগপত্র দিলেই তা কার্যকর হয়, এক্ষেত্রে তা হয়নি।’
একই দিনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের আদালতে দ্বারস্থ হয়ে ব্যাখ্যা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
মন্ত্রীদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রসঙ্গে সুরঞ্জিত বলেন, ‘সব মন্ত্রী আইন-সংবিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন, এমন নয়। তারপরও সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে, উঠবেও। এর ব্যাখ্যা সুপ্রীম কোর্ট দেবেন।’
মন্ত্রিসভার পদত্যাগ নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে দফতরবিহীন মন্ত্রী বলেন, তারাতো ‘পার্টি অব ব্যারিস্টারস’ বলে মনে করেন। তারপরও পড়ে পড়ে দেখবেন না। ওই যে লেখা থাকে, এখানে থুথু ফেলিবেন না, ফেলিলে দণ্ডনীয়। আমি যদি পড়ি, এখানে থুথু ফেলিবেন, না ফেলিলে দণ্ডনীয়।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উস্কানি, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসৌজন্যমূলক।’
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকে ‘সংযত’হওয়ার আহবান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, ‘মন্ত্রিসভার এই পদত্যাগ নিয়ে দেশে একটা মহাপ্রলয় হচ্ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম নানা রকম নিউজ করছে। কেউ পুলিশকে বলছেন, মন্ত্রীদের গাড়িতে পতাকা দেখলেই নামিয়ে ফেলুন। আবার কেউ সেক্রেটারিদের বলছেন, মন্ত্রীর স্বাক্ষর নেবেন না।’
(দিরিপোর্ট২৪/আরএইচ/এনডিএস/নভেম্বর ১৩,২১০৩)