সোহেল রহমান, দিরিপোর্ট : পাঁচ মাস পার হলেও জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি শর্ত পূরণে তেমন অগ্রগতি নেই। বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী এসব শর্তের সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর ‘ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ’ (ইউএসটিআর)-এ পাঠাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনবর্হাল করা, না-করার বিষয়ে আগামী ডিসেম্বরে সিদ্ধান্ত জানাবে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত: ২৭ জুন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরপরই বাংলাদেশের কারখানার পরিবেশ উন্নত ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে ১৬টি শর্ত দিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর। ডিসেম্বরের মধ্যে এসব শর্তগুলোর ব্যাপারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারলে বাংলাদেশে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে তখন বলা হয়েছিল।

ইউএসটিআর প্রদত্ত শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আমিনুল হত্যাকাণ্ডের বিচার করা, ঝুঁকিপূর্ণ কল-কারখানা পরিদর্শনের জন্য পরিদর্শক নিয়োগ, চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (সিডিএ) পুনর্গঠনের আওতায় ৩২টি পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি) পুনর্গঠনের আওতায় ২৬০ জন পরিদর্শক নিয়োগ, শিল্প এলাকায় ৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকের চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, আইএলওর সহযোগিতায় ওয়েবসাইট ভিত্তিক ডাটাবেইজ তৈরি, সংশোধিত শ্রম আইনের একক মৌলিক ইংরেজি অনুবাদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, বিসিডব্লিউএস এবং সেফের নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়া, বিদ্যমান শ্রম আইন ইপিজেডে প্রয়োগ এবং চিংড়ি খাতে শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

শর্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহাবুব আহমেদ দিরিপোর্টকে বলেন, ‘সবক্ষেত্রেই ইতিবাচক অগ্রগতি রয়েছে। শ্রম আইন সংশোধন ও মামলা প্রত্যাহারসহ কয়েকটি ইস্যুর নিষ্পত্তিও ঘটেছে। এছাড়া কিছু বিষয় রয়েছে বাস্তবায়নাধীন।‘

এদিকে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠিত এক বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ শর্তের ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন অগ্রগতি খুব সামান্য। যুক্তরাষ্ট্রের শর্তগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শ্রম, অগ্নি ও ভবন পরিদর্শক সংখ্যা বাড়িয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া। এ শর্ত বাস্তবায়ন বলতে কেবল ৪ জন শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৭০ জন শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। তাছাড়া প্রথম পর্যায়ে ৩৯২ জনসহ মোট ৬৭৯ জন পরিদর্শক নিয়োগ করে প্রধান কলকারখানা পরিদর্শক কার্যালয়কে অধিদফতরে রূপান্তরের উদ্যোগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেও আটকে আছে সচিব কমিটির অনুমোদন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ জন থেকে বাড়িয়ে ৩১০ জন করার প্রস্তাব গত ৯ অক্টোবর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। তবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিদর্শক বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পরিদর্শক সংখ্যা ৮ জন হতে বাড়িয়ে ৪০ জন করার প্রস্তাব এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েই রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শর্তে রয়েছে সকল সক্রিয় পোশাক কারখানার গঠনগত নকশা, ভবনের নিরাপত্তা ও অগ্নি নিরাপত্তার সমীক্ষা সম্পন্ন করে দুর্বল কারখানাগুলোকে হয় স্থানান্তর নতুবা বন্ধ করে দিতে হবে। এ শর্ত বাস্তবায়নে এখনো কাজ শুরু করেনি সরকার। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’ (আইএলও) ও বিদেশি ক্রেতাদের মর্জির ওপর। চালু ৩ হাজার ৫০০ কারখানার মধ্যে আইএলও ও বুয়েট মিলে ১ হাজার ৫০০টি সমীক্ষা চালাবে। বাকি ২০০০ কারখানার মধ্যে ইউরোপের ক্রেতাদের জোট-এ্যাকর্ড ১ হাজার ২০০, উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ৫০০ এবং এই দুই জোটের উভয়েই ৩০০ কারখানায় সমীক্ষা চালাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্য আরেকটি শর্ত হচ্ছে, জনসাধারণের জন্য উমুক্ত এমন একটি তথ্যকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সকল কারখানার ভবনের মান, অগ্নি নিরাপত্তা ও শ্রম পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য থাকবে। এছাড়া একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে শ্রমিকরা চাইলেই অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এছাড়া শ্রমিক সংগঠন হিসেবে নিবন্ধনের আবেদনকারীদের নিবন্ধন দেয়া বা না-দেওয়ার বিষয়টি কারণসহ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। এ তিনটির কোনটিই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। আইএলও’র সহযোগিতায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে এ শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মাত্র।

(দিরিপোর্ট/এসআর/ডব্লিউএস/এমডি/নভেম্বর ১৩, ২০১৩)