সাগর আনোয়ার, দিরিপোর্ট : আবার আলোচনায় তৃতীয় শক্তি! নভেম্বরের শুরু থেকে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থান। হরতাল ইস্যুতে সারাদেশে রক্তক্ষয়ী সহিসংতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীনের পর ভারতীয় দূতাবাসের হঠাৎ উদ্বেগ প্রকাশ। সর্বশেষ ভারতীয় পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশের রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতায়নের আশঙ্কা করছেন।

তাদের দাবী, রাজনীতি শুদ্ধিকরণের নামে বিরাজনীতিকরণ করে দুই জোটকে ক্ষমতার বাইরে রেখে অন্যকোন জোট বা দলকে ক্ষমতায় আনতেই সুশীল সমাজসহ ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের রাজনীতিকদের একটি অংশ এ তৎপরতায় লিপ্ত।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে চলমান হরতালে শতাধিক লোকের প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি দূতাবাসগুলোর উদ্বেগ। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের হঠাৎ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি ও সর্বদলীয় সরকারে অংশ না নেয়ার ঘোষণা। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের অতি উৎসাহি আক্রমণ ও গণগ্রেফতার, নতুন করে হেফাজতে ইসলামের নতুন কর্মসূচির তৎপরতা, সম্প্রতি সাঁথিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ হামলাসহ সব কিছুই অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে তৃতীয় শক্তির প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করতেই করা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ্ কিছু নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা গঠিত নাগরিক ঐক্য এবং নাগরিক মঞ্চের তৎপরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তাদের দেয়া সরকার এবং বিরোধী দল বিরোধী বক্তব্য এদেশে তৃতীয় শক্তিকে গ্রহণযোগ্য করার প্রচারণাও বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

রাজনৈতিক পর্যক্ষেকদের মতে, ড. ইউনূসের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট অবস্থান, রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খানের ঢাকা ও যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক তৎপরতা, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সরকারবিরোধী অবস্থান এবং সাম্প্রতিক ছোট দলের বড়নেতাদের রাজনৈতিক ভূমিকা দুই দলকে ব্যর্থ করে তৃতীয় শক্তির উত্থানের পরিকল্পনাকে জোরালো করছে।

তাদের দাবী, এটি বুঝতে পেরেই বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বিএনপির জোটে যাচ্ছে না। তারা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রবকে নিয়ে গোপনে এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিচ্ছেন।

এছাড়া এরশাদও নেপথ্যে থেকে এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিচ্ছেন এমন কথাও এখন ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্রের দাবি, আগামী ১৫ নভেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর কলেজ মাঠে ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে কারচুপির ১৪ বছর পূর্তিতে মহাসমাবেশ করবে কাদের সিদ্দিকী। এ মহাসমাবেশে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব উপস্থিত থাকবেন বলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সূত্রে জানা গেছে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক দিরিপোর্টকে বলেন, নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ও সরকারের দুঃশাসনের প্রতিবাদে আমরা ১৫ তারিখ মহাসমাবেশ করবো। ওইদিন জাতীয় নেতারা উপস্থিত থেকে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির ঘোষণা দেবেন।

দেশের বর্তমান সংকট সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমীন বেপারী দিরিপোর্টকে বলেন, দেশের যে অবস্থা তাতে মনে হয় না দেশের নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে। সব কিছুই মনে হচ্ছে অদৃশ্য সূতোর টানে চলছে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে পরিবর্তন থেকে শুরু করে পুলিশ বাহিনীতেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে আমার মনে হয় না। তা না হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে হঠাৎ করে পুলিশ সিটিং এমপিসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করতো না। সরকারের শুভবুদ্ধিও উদয় না হলে দেশে ভিন্ন সরকারের আবির্ভাব অবশ্যম্ভাবী।

ভিন্ন সরকারের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, হয়তো সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা নিবে না, তবে একটা জাতীয় সরকার গঠিত হলে তাতে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সমর্থণ থাকবে।

ড. নুরুল আমীন আরো বলেন, সরকার যদি মনে করে তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে দেবে না সেটা ভিন্ন বিষয়। বিএনপির মধ্যেও আপোষের কোন লক্ষণ নেই। তবে গণতন্ত্র ব্যাহত হলে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের জন্যই বেশি খারাপ ফল বয়ে নিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, রাতে কুকুর-বিড়াল ডাকা ভালো না, অতীতে যেসব শাসকের সময় রাতে কুকুর-বিড়াল ডাকতো তারাও এরকম মানুষকে গুলি করে মেরেছে। তাই এখন সমঝোতার কোন বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না।

(দিরিপোর্ট/এসএ/এসবি/নভেম্বর ১৩, ২০১৩)