৭ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের টার্গেট
দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ৭ ডিসেম্বর ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছে। গত শুক্রবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিতের পর নতুন তারিখ নির্ধারণ নিয়ে সংগঠনটির শীর্ষমহলে চলছে আলোচনা।
সমাবেশ করার ক্ষেত্রে চলমান রাজনৈতিক সংকট ও সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিবেশকে সামনে রেখে শীর্ষ নেতারা এগুচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ নভেম্বর ও ৭ ডিসেম্বর সম্ভাব্য তারিখ ধরে ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটির শীর্ষ নেতারা। দুটি তারিখ নিয়েই আলোচনা চলছে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে। এক্ষেত্রে ৭ ডিসেম্বরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
হেফাজত সূত্র জানায়, ২৫ নভেম্বরের আগে অন্তর্বর্তী হোক বা নির্দলীয় হোক নির্বাচনকালীন কোনো সরকারই হচ্ছে না। এ পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ বহাল থাকছে।
এ অবস্থায় হেফাজতের কোনো কর্মসূচি করার অনুমতি দিবে না সরকার। আর অনুমতি না পেলে জোর করে কর্মসূচি পালনের পক্ষে নন অধিকাংশ নেতা। তাই বুঝে শুনে কৌশলেই এগুতে চান তারা।
হেফাজতের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদের প্রতি সরকার অনেকটাই নমনীয় হবে। তাই সংগঠনটির একটি অংশ ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই ঢাকায় মহাসমাবেশ করার জন্য আল্লামা আহমদ শফীসহ শীর্ষ নেতাদের চাপ দিচ্ছেন।
তারা চাচ্ছেন অন্তবর্তী সরকার গঠনের প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগকে চাপে রাখতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো এবং আলেম-উলামাদের বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়- এর প্রমাণ হিসেবে আওয়ামী লীগকে তাদের শক্তি দেখাতে চান তারা।
অন্যদিকে হেফাজতের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত অংশটি চাচ্ছেন কর্মসূচি একটু পিছিয়ে নিতে। তারা মনে করেন, এই মূহূর্তে যদি ৫ মে’র মতো ঢাকার শাপলা চত্বরে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক বা ইসলামপন্থীদের বড় ধরনের জমায়েত ঘটে তাহলে বিএনপি জোটের জন্য বর্হিবিশ্বে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিদেশিদের কাছে আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে জঙ্গীবাদের উত্থান হিসেবে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে পারে। তাই আপাতত কর্মসূচি পেছানোর পক্ষেই তারা।
হেফাজতের প্রভাবশালী অংশটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর অবস্থা বুঝে কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে। বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে এটি পর্যালোচনার পরই মহাসমাবেশের মতো কঠোর কর্মসূচির দিকে যাওয়ার পক্ষে তারা।
হেফাজত সূত্র আরো জানায়, ঢাকায় মহাসমাবেশ করার আগে বিভাগীয় পর্যায় ও জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করে জনমত গঠন করতে চায় শীর্ষ নেতারা। চট্টগ্রামে সমাবেশ করার মাধ্যমে বিভাগীয় সমাবেশের কাজও শুরু হয়েছে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোতে সমাবেশ করারও প্রস্তুতি নিয়েছে সংগঠনটি। এরপর তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করার চিন্তা ভাবনা করছে।
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান দিরিপোর্টকে জানান, এখন পর্যন্ত মহাসমাবেশের তারিখ নির্ধারণ হয়নি। তবে এ নিয়ে সম্ভাব্য কয়েকটি তারিখ নিয়ে প্রস্তাবনা আসছে। কেউ ২৩ নভেম্বর, কেউ ৩০ নভেম্বর আবার কেউ তা পিছিয়ে ৭ ডিসেম্বর করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। শীর্ষ নেতারা বসে সমাবেশের তারিখ ঠিক করবেন।
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, সমাবেশের তারিখ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নীতি নির্ধারণী ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
হেফাজতের ঢাকা মহানগরের প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেল জানান, কবে মহাসমাবেশ করা হবে এ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই তারিখ ঘোষণা করবেন শীর্ষ নেতারা।
গত শুক্রবার রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডেকেও কর্মসূচি স্থগিত করে হেফাজত। পুর্বেঘোষিত ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন, গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’ পাসের চেষ্টার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। ওইদিন পবিত্র আশুরা এবং তাবলীগ জামায়াতের কর্মসূচি থাকায় কর্মসূচি পেছানো হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
চলতি বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকার শাপলা চত্বরে প্রথম মহাসমাবেশ করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। পরবর্তীতে গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে তারা। ওইদিন বিকেল থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত রাজধানীসহ বিভিন্নস্থানে ভাঙচুর করে হেফাজতকর্মীরা।
ওইদিন রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতকর্মীরা অবস্থান নিতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গভীর রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংষর্ষে সেদিন বহু মানুষের হতাহতের খবর আসে মিডিয়ায়। যদিও এ নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগ।
শাপলা চত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন সমালোচনার মধ্যে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। অধিকাংশ শীর্ষ নেতা গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে পড়ে সংগঠনটির। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে বৈঠকও করতে পারছিলেন না নেতারা। এ অবস্থায় ধীরে ধীরে তারা তাদের শক্তি সঞ্চয় করতে থাকেন। অপেক্ষায় রয়েছেন আবারো শক্তি প্রদর্শনের।
(দিরিপোর্ট২৪/কেএ/এমসি/জেএম/নভেম্বর ১৭, ২০১৩)