মন্ত্রিসভায় নীতিমালা অনুমোদন
জ্যেষ্ঠ নাগরিকের স্বীকৃতি পাচ্ছেন প্রবীণরা
দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রবীণ ব্যক্তিদের বৈষম্য, নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ জীবন ও অধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রবীণ ব্যক্তিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য চালু করা হবে পরিচিতি কার্ড, গঠন করা হবে বিশেষ কল্যাণ তহবিল।
রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এ অনুমোদনের কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বার্ধক্যের সংজ্ঞা সম্পর্কে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের প্রবীণ হিসাবে বিবেচনা করা হলেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং জাতিসংঘ বিবেচনায় ৬০ বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদেরকে প্রবীণ বলা হয়।
জাতিসংঘের স্বীকৃতি বিবেচনায় বাংলাদেশে ৬০ বছর এবং তার বেশি বয়সী ব্যক্তিরা প্রবীণ হিসেবে বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশে মৃত্যুহার কমে যাওয়ার প্রবীণের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
মোশাররাফ হোসাইন আরো বলেন, প্রবীণদের সুবিধার্থে সকল প্রকার যানবাহনে প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষণ এবং স্বল্পমূল্যে টিকিট প্রদানের ব্যবস্থা, পাশাপাশি প্রবীণ ব্যক্তিদের টিকিট সংগ্রহের কষ্ট লাঘবে আলাদা টিকিট কাউন্টার স্থাপন করার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে।
এছাড়া সকল প্রকার টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড, হাসপাতাল ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ভবনসমূহে ঢালুপথের ব্যবস্থা রাখা হবে। শহরের প্রতিটি ফুটপাত, উঁচু রাস্তার শেষপ্রান্ত চলাচলের সুবিধার্থে ঢালু করা হবে। প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য স্থাপন করা হবে দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং প্রবীণ নিবাস। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রবীণদের জন্য এসব সুবিধা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।
মোশাররাফ হোসাইন বলেন, প্রবীণ ব্যক্তিদের দারিদ্র্য লাঘবের জন্য আয়বর্ধক কাজের সুযোগ, ক্ষুদ্রঋণ, বাজার ও সম্পদের উপর প্রবীণ ব্যক্তিদের সম প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। প্রবীণ, বিশেষ করে প্রবীণ নারীদের আয়বর্ধক এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণে সহায়তা করা হবে।
দেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের কল্যাণে প্রবীণ বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা বাস্তবায়ন, তদারকি ও মূল্যায়নে বিভিন্ন পর্যায়ের চারটি কমিটি কাজ করবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ কমিটিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবীণ ব্যক্তি বিষয়ক জাতীয় কমিটি, জেলা প্রবীণকল্যাণ কমিটি, থানা বা উপজেলা প্রবীণকল্যাণ কমিটি ও পৌর ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন প্রবীণকল্যাণ কমিটি।
এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি প্রবীণ বিষয়ক নীতিমালার বাস্তবায়ন, পর্যালোচনা এবং পরিবীক্ষণ করবে।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট (সংশোধন) আইন ২০১৩ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে আমরা ইউনেস্কোর বি ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সহযোগিতা নিতে চাই। বি ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইউনেস্কো প্রশাসনিক আওতার বাইরে রেখে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ইউনেস্কোর বি ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে ই্ন্সটিটিউটের বোর্ডে ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের প্রতিনিধি রাখতে হয়। কিন্তু ২০১০ সালের ইন্সটিটিউটের আইনে এটি নেই। তাই সংশোধনের মাধ্যমে বোর্ডে ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের প্রতিনিধি রাখার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।
বি ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেলে মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট ইউনেস্কোর নাম ও লোগো ব্যবহার করতে পারবে। একইসঙ্গে কারিগরি, বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
(দিরিপোর্ট/আরএমএম/এপি/নভেম্বর ১৭, ২০১৩)