বৈশাখের ছড়া
বৈশাখী
খালেক বিন জয়েনউদদীন
বৈশাখী মেয়ে এলো আমাদের গাঁয়েতে
কপালের টিপপরা রংমাখা পায়েতে।
ধানকুলা হাতে তার বাজে ঢাক-ঢোলক
হাসি-খুশী মুখখানা দোলে নাকে নোলক।
বৈশাখী মেয়ে এলো মেলা বসে মাঠেতে
খোকাখুকুর মন নেই একা একা পাঠেতে।
বাড়ি বাড়ি গান গায় মাতে নববর্ষে—
বরণের ডালাখানি হাতে নিয়ে হর্ষে।
তাই দেখে বৈশাখী হাসে বড় মুচকি—
দই-চিড়ে-সন্দেশ আরো খায় ফুচকি।
সার্কাসের হাতি-ঘোড়া ভালুকের মায়াতে
একবছর থেকে যায় পল্লীর ছায়াতে।
[সাহিত্যিক ও ছড়াকার খালেক বিন জয়েনউদদীনের জন্ম : ১৯৫৪ সালের ২৪শে জানুয়ারি ]
বোশেখের কারুকাজ
নাসের মাহমুদ
এই বোশেখে গাঁও নগরে
খোকা খুকুর হুল্লোড়ে,
বন বাদাড়ে নির্জনতা
ভীষণ রকম দুললো রে!
পরাণ খুলে বনের পাখি
বৈশাখী সুর ধরলো রে,
শত ফুলে গাছের শাখা
রঙে রঙে ভরলো রে।
মেঘ চলেছে মেঘের বাড়ি
বাতাসে মেঘ তাড়াচ্ছে,
গাঙকে সচল করতে পাহাড়
গাঙের গতর নাড়াচ্ছে।
[সাহিত্যিক ও ছড়াকার নাসের মাহমুদের জন্ম : ১৯৫৬ সালের ১ জুলাই]
নববর্ষের চিঠি
সুজন বড়ুয়া
সময় ও স্রোত
-------দাঁড়িয়ে থাকে না
--------------বয়ে চলে অবিরাম
নতুন বছর
-------নিয়ে আসে তাই
--------------নতুন চিঠির খাম।
গেলো বছরেও
-------এসেছিল ঠিক
--------------এমন একটি চিঠি
লেখা ছিল তাতে
-------কত হাসি-গান
--------------তারাদের মিটিমিটি।
মুক্তা হরফে
-------বোনা ছিল আরো
--------------স্বপ্ন ও কল্পনা
সোনা অক্ষরে
-------ছিল থরে থরে
--------------আশা ও সম্ভাবনা।
কিন্তু সে চিঠি
-------পড়া না হতেই
--------------বছর হয়েছে শেষ
শেষ তো হয়নি
-------দুঃখ-বেদনা
--------------হিংসা ও বিদ্বেষ।
দ্রব্যমূল্যে
-------আকাশ ছুঁয়েছে
--------------বঞ্চনা-লাঞ্ছনা
শত চেষ্টায়
-------ক্ষুধা-তেষ্টায়
--------------জোটেনি যে ক্ষুদ-কণা।
আবার এসেছে
-------নতুন বছর
--------------ঘুচবে কি ব্যর্থতা?
জানি না এবার
-------নতুন চিঠিতে
--------------কী আছে নতুন কথা!
নতুন বছর
-------বুকে নিয়ে আছি
--------------অনেক স্বপ্ন-আশা
হোক অন্তত
-------এবার সত্য
--------------তোমার চিঠির ভাষা।
[ সাহিত্যিক ও ছড়াকার সুজন বড়ুয়ার জন্ম : ১৯৫৯ সালের ১৮ এপ্রিল ]
নতুন আশা
বিলু কবীর
জের টেনে ফের হালখাতাতে
-------নতুন হিসাব শুরু,
আসতে পারে কালবোশেখী
-------বুকটা দুরু-দুরু।
সেই ভয়ে এই নতুন বছর
-------থাকবে নাকি বসে,
মেঘ বিজলী কোন্ কারণে
-------ওমন রুদ্র-রোষে,
আকাশ ভেঙে হামলে পড়ে
-------পাহাড় নদীকূলে,
জল ও বায়ুর মেজাজ চড়ে
-------এই আমাদের ভুলে।
সেই কারণে ধ্বংসলীলা
-------সকল সর্বনাশা,
সব পুরাতন উড়িয়ে তবু
-------জাগায় নতুন আশা।
[ সাহিত্যিক ও ছড়াকার বিলু কবীরের জন্ম : ১৯৬১ সালের ৪ঠা এপ্রিল ]
আজকে
জগলুল হায়দার
বাইরে ঘুরে দিন কাটাবো
বেলুন কিনে খুব ফাটাবো
হারিয়ে বোশেখ মেলায়
দই চিড়া আর খই মুড়িতে
আকাশ ছোঁয়া রং ঘুড়িতে
ভাসবো খুশীর ভেলায়।
মায়ের বকা বাবার গাল
থোরাই এসব পুরান চাল
আজকে সবই তুচ্ছ
আজকে শুধু উড়তে চাই
ঘুড়ির মতো ঘুরতে চাই
ছড়িয়ে মনের পুচ্ছ।
[সাহিত্যিক ও ছড়াকার জগলুল হায়দারের জন্ম : ১৯৬৫ সালের ৮ অক্টোবর শুক্রবার]
বৈশাখী প্রত্যাশা
ফয়সাল শাহ
প্রাণের উৎসব এলো, এলো নববর্ষ
গ্রাম-নগর-শহরে তাই আনন্দ হর্ষ।
পান্তা-ইলিশ-শুঁটকি-ভর্তা আর নানা মিষ্টি
ছোট-বড় সকলের দেশী খাবারে দৃষ্টি।
বেদনার দিন ভুলে আজ আশায় বাঁধি বুক
প্রত্যাশার রঙিন স্বপ্নে উড়ে যাক সকল দুখ।
এ যে শান্তির খোঁজে একঝাক বলাকার উড়ে চলা
প্রত্যাশা রং-রূপ-আনন্দে আগামীর পথচলা।
[সাহিত্যিক ও ছড়াকার ফয়সাল শাহের জন্ম : ১৯৬৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি]
বটতলে বসে মেলা
মালেক মাহমুদ
বৈশাখে বসে মেলা বটপাতা ঘরে
মাটির শত পুতুল একা খেলা করে।
কুমড়োর বিচিগুলো পলিমাটি পেল
ঝড়-হাওয়া বৃষ্টি করে এলোমেলো।
বৈশাখী ফলগুলো কচিকাচা সাজ
চলো সবে বটতলে ঘুরে আসি আজ।
মা বাবা ভাই বোন দাদা দাদী মিলে
লালঘুড়ি নীলঘুড়ি ওড়ে দেখি নীলে।
নীলামন ফুলবন হাতি ঘোড়া খেলা
তালপাখা তালবাঁশী শত তালে মেলা।
বাংলার লোকগাঁথা বাংলাই রবে
বৈশাখী নব হাসি চিনে আসে তবে।
বাংলার মুখটারে যেই চিনি আমি
বাংলাকে ভালোবেসে হব মহাদামী।
[সাহিত্যিক ও ছড়াকার মালেক মাহমুদের জন্ম : ৫ই এপ্রিল ১৯৬৯]
বি. দ্র. : সম্পাদনা নীতি অনুযায়ী লেখকের বয়োজ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে লেখা বিন্যাস করা হয়েছে।