দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাফরান আহাত। বয়স ৭। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে সাভারের একটি স্কুলে। বাবার হাত ধরে মেলার স্টলে স্টলে ঘুরছে আর কী নেওয়া যায় সেটা গভীর মনে চিন্তা করছে। শেষমেশ পছন্দ হলো মিছরির ঘোড়া! সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে বলে দুই হাতে দুটো ঘোড়া নিয়ে মুখে সেকি হাসি। কথা হলো তার বাবার সঙ্গে। ‘ওর স্কুল স্বাভাবিক কারণেই বন্ধ। চাকরির কারণে বেশি সময়ও পাওয়া যায় না। তাই এমন একটা দিনে ওকে এখানে নিয়ে না এসে পারলাম না’ হাসতে হাসতে বললেন আহাতের বাবা।

জাহাঙ্গীরনগর এমনই এক খণ্ড জমি যেখানের বৈশাখ উদযাপনের প্রথম দিনে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানটি শুধু এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মুখেই শোভা পায় না বরং নানা জায়গার সংস্কৃতিপ্রেমীদের কণ্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় জাহাঙ্গীরনগরে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে চলে বাংলা বর্ষবরণ। সোমবার সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। উপাচার্য ফারজানা ইসলাম শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের কাউকে দেখে চেনার উপায়ই থাকে না যে সে কারও পরিচিত! তাদের মুখে বাঘ, পেঁচা, ময়ূর, আরও অনেক পশুপাখির মুখোশ থাকলে তাদের না চেনাই তো স্বাভাবিক! মুখোশ পরিহিত কাউকে দূর থেকে দেখলে দৃষ্টিভ্রম হওয়াটাও অস্বাভাবিক না। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে চলে পান্তা- ইলিশ খাওয়ার ধুম। তারপর মহুয়াতলায় বাংলা বিভাগের আয়োজনে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

নববর্ষে পুরো ক্যাম্পাস যেন বিনোদন নগরীতে পরিণত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে উৎসব! টিএসসি প্রাঙ্গণে উৎসব, শহীদ মিনারের পাদদেশে তিলধারণের জায়গা ছিল না, ট্রান্সপোর্টের কথা তো বলাই বাহুল্য! টারজান পয়েন্ট, ডেইরি গেট, প্রান্তিক গেট, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বটতলা, মুরাদ চত্বর, নতুন কলা ভবনের সামনে সাপের খেলা! কোথায় নেই উৎসব! তাই তাকে উৎসবের নগরী না বলে উপায় আছে?

অন্যদিকে বৈশাখ বরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মেলার প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে মেলায় ২০টি স্টল বসিয়েছে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন পণ্যের কেনাবেচা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। উৎসব চলবে বুধবার পর্যন্ত।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/এনডিএস/শাহ/এপ্রিল ১৫, ২০১৪)