দিরিপোর্ট ডেস্ক: শচিনে ক্রিকেটীয় অধ্যায়ের শেষ ম্যাচের আগে বরিঠাকুরের এই গানটি মনের কোনায় বাজিছিল-‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহৃ এই ঘাটে’। শচিন টেন্ডুলকারকে আর ম্যাচে দেখা যাবেনা এমন বিষয়টি বর্ণনার শব্দকোষেও অধরা। তাকে ছাপার অক্ষরে সাজানো যায়না; যেতে পারে না।

দিনের কথা জানাই ছিল। আগে-ভাগে ঢাক-ঢোল বাদ্যি বাজিয়ে শচিনের জানিয়েছিলেন তার প্রস্থানের কথা। জানা-ই তো ছিল মুম্বাই টেস্টের পর বাইশ গজের ভূখণ্ডে ব্যাট হাতে আর শচিনের সধাময়ী ব্যাটিং দেখা যাবে না। তাই ক্রিকেটের ‘ঈশ্বর’ শচিনকে বিদায় জানাতে আয়োজন, শ্রর্দ্ধাঘ্যের আতিশয্যের জট বেধেছিল। শচিন ক্রিকেট ব্রাহ্মাণ্ডের কক্ষপথে প্রায় আড়াই দশক উজ্জ্বলতম অভিযাত্রায় সামিল ছিলেন। ফলে যখণ শচিন ৭৪ রানের ইনিংস শেষ করে মাঠ ছাড়ছিলেন তখন দুঃখ-শোক-ভালোবাসা-মোহ-আবেগ-আকুতি-সব ছাপিয়ে সৃষ্টি হচ্ছিল এক বিহ্বল শূন্যতা৷ দুশোতম টেস্টে একশো থেকে ২৬ কদম দূরে থেমেছেন এই ক্রিকেট মহারথি। ম্যাচের ব্যাট-বলের চক্কর জানিয়ে দিচ্ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে নামা হচ্ছে তার। হয়েছেও তাই ভারতের ৪৯৬ রানের এক ইনিংস পেরুতে পারেনি উইন্ডিজ ২ ইনিংস যোগ করে। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা শচিনকে নিয়ে শেষম্যাচে সেঞ্চুরির দেখায় উচ্চাশার রঙমশাল এক নিমিষে এনে দিয়েছে শ্মশানস্তব্ধতা৷শচিনের শেষ ম্যাচে কোনো উইন্ডিজ এই নিয়ে বিহ্বগলে করুণ সুরও আছড়ে পড়েছে জন্মভূমির গ্যালারিজুড়ে।

মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির চিরচেনা অবয়বের ব্যাটসম্যান শচিন যখন মাঠ ছাড়ছিলেন; তখন একবার থমকে গ্যালারির দিকে তাকালেন; পরক্ষণেই ব্যাট তুলে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। গ্যালারিতে নেমে এসেছিল পিন-পতন নিরবতা। দাঁড়িয়ে শচিনভক্তরাও শ্রদ্ধা জানালেন;-‘আমরা কোনোদিন ভুলবনা’।

স্রেফ রর্কেড নয়, স্রেফ রানের সিংহাসনে নয়৷ ক্রিকেট পরিভ্রমণে শচিন শিরা-ধমনী-নাভিশ্বাস-প্রশ্বাস-অস্থি মজ্জায় থাকছেন থাকছেন; থাকবেনই। তিনি কখনো বিস্মৃতির আড়ালে যেতে পারেন না। শচিন ততদিন যতদিন ক্রিকেট থাকবে৷ যতদিন বাইশ গজ, ততদিন৷ যতদিন ব্যাট-বল, ততদিন শচিন!

অশ্রুসজল বিদায় নিয়েছেন ক্রিকেট ঈশ্বর। আগেই তৈরি ছিল বিদায় মঞ্চ। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে দল শচিনকে বিদায় দিয়েছে এক ইনিংস ও ১২৬ রানে পতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। শচিনকে শেষ উপহার দিল টিম ইন্ডয়িা। বিদায় ক্ষণে জাতীয় পতাকা নিয়ে সর্তীথদের কাঁধে চেপে মাঠ পরিক্রম করার সময় গ্যালারি জুড়ে একটাই আয়োজন ছিল...শ...চি..ন/শ...চি...ন। তারপরও সেখানে উঁকি দিচ্ছিল কঠিন বিষন্নতা। ক্রিকেট সম্রাট চিরচেনা উইকেটকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেই ধীরে ধীরে ঢুকে যান ড্রেসিংরুমে।

গত ২৪ বছর ধরে ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য অবদান রেখেছেন শচিন। তাই তার জন্য তুলে রাখা হয়েছে একের পর এক সম্মাননা। সবচেয়ে বড় ঘটনা, স্বীকৃতি হিসেবে ভারতে প্রথম ক্রীড়াবিদ শচিন পাচ্ছেন ভারতরত্ন । আর ওই খবরের পরপরই শচিন জানিয়েছেন, ‘আমি ওই গৌরবময় উপহার মাকে উৎসর্গ করব।’

(দিরিপোর্ট/এএস/সিজি/নভেম্বর ১৭, ২০১৩)