কি কথা তাহার সনে
কাওসার আজম, দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মধ্যে বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা।
পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকে দুইজনের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছে, কেনইবা আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে হঠাৎ এরশাদের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে গেলেন- এসব নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
জাতীয় পার্টি এবং হেফাজত নেতারা বলছেন, আল্লামা আহমদ শফীর দোয়া নিতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ।
তবে, বৈঠকে দুইজনের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে জাপা ও হেফাজত নেতারা ভিন্ন কথা বলেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দিরিপোর্টকে জানান, ‘এরশাদ সাহেব হুজুরের (আহমদ শফী) দোয়া নিতে এসেছিলেন। তিনি তাকে দোয়া দিয়েছেন।’
এ সময় আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতের ১৩ দফা দাবির বিষয়ে কথা তুললে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, ‘তিনি আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারলে ১৩ দফার বাস্তবায়ন করবেন।’
বৈঠকে আর কি কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, তারা (জাতীয় পার্টি) কোনো পলিটিক্যাল এজেন্ডা নিয়ে আসেননি। এছাড়া হেফাজত যেহেতু অরাজনৈতিক সংগঠন তাই তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য বা প্রস্তাব নিয়ে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি।
এদিকে বৈঠক শেষে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে আগামী নির্বাচন এবং দেশের চলমান রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘হুজুর এরশাদ সাহেবকে বলেছেন, আল্লাহ এবং রাসূল (স:) নির্দেশিত হেফাজতের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে যাদের অঙ্গীকার থাকবে তাদের প্রতি হুজুরের দোয়া এবং সমর্থন থাকবে।’
এ সময় এরশাদ আহমদ শফীকে জানান, তিনি আলাদা জোট করে নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচনে জয়ী হলে ১৩ দফা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবেন।
তবে, হেফাজত নেতাদের পক্ষ থেকে ১৩ দফা বাস্তবায়ন নিয়ে এরশাদের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হলেও বৈঠকে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তিনি দিরিপোর্টকে জানান, ‘স্যার শুধুমাত্র দোয়া নিতে গিয়েছিলেন। শফী সাহেব তাকে দোয়া দিয়ে বলেছেন, আপনি ইসলামের জন্য অনেক কাজ করেছেন। দোয়া করি আগামীতে আরো কাজ করবেন।’
১৩ দফা বাস্তবায়নে এরশাদ কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, ‘বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। আর ১৩ দফা নিয়েও কোনো কথা হয়নি।’
এর আগে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এরশাদ চট্টগ্রামে পৌঁছেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে এরশাদ হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফির রুমে প্রবেশ করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে তিনি আহমদ শফীর রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।
বৈঠকে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু ও চট্টগ্রাম জাপার আহবায়ক সোলেয়মান আলম শেঠ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আলাদা জোট গঠন করে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃতীয় জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুই জোটের বাইরে গিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে যাতে সফল হতে পারি সেজন্য হুজুরের সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিতে এসেছি। উনি আমাকে দোয়া করেছেন।’
(দিরিপোর্ট/কেএ/এসবি/এমডি/নভেম্বর ১৭, ২০১৩)