‘নির্দলীয় সরকারই একমাত্র সমাধান’
তারেক সালমান ও মাহমুদুল হাসান, দিরিপোর্ট : নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে চলমান আন্দোলন আর থামবে না। হবে আরও কঠোর আন্দোলন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট মনে করে, খালেদা জিয়া সব বিষয়েই ছাড় দিতে পারেন, কিন্তু শেখ হাসিনা বা দলীয় কোনও ব্যক্তিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে মানবেন না।
বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোট নেতারা স্পষ্ট করে বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ‘নির্দলীয় সরকারই’ সমধানের একমাত্র পথ।
বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলন আরও বেগবান করতে খালেদা জিয়া নিজেই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নানা কারণে নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করা হচ্ছে। এ জন্য দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
চেয়ারপারসনের নির্দেশ পেয়েই দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজও শুরু করেছেন। বিশেষ করে, ওয়ান-ইলেভেনে যেসব নেতা বিএনপি ও জিয়া পরিবার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন তাদের প্রতি খালেদা জিয়ার রয়েছে বিশেষ দৃষ্টি।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নিজেও মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তৃণমূলের সব নেতা-কর্মীর টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর এখন তার হাতে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যারা সময়মতো রাজপথে থাকবেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের দলে স্থান দেবেন।
২৫ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলের সমাবেশ থেকে ‘আন্দোলন ও আলোচনা এক সঙ্গে চলবে’- এমন ঘোষণা দেন। এরপর থেকে তিনি এ বিষয়ে অনঢ় রয়েছেন।
১০ নভেম্বর রাতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সভাপতি আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। ওই সময় খালেদা জিয়া আবারও নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে তার অনঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন।
ইউসুফ হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার যদি নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নীতিগতভাবে মেনে আলোচনায় বসে, তাহলে বিএনপি তাতে সাড়া দেবে।’
প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ইসরাফিল রতন দিরিপোর্টকে জানান, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের নেতা এখনও অনঢ়। এ বিষয়ে তিনি কোনো রকম ছাড় দিতে রাজি নন। নানামুখী চাপ সত্বেও খালেদা জিয়ার মানসিক অবস্থা অত্যন্ত দৃঢ়। যা খুবই প্রশংসনীয়। তিনি (খালেদা জিয়া) আমাদের প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবেন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপিপন্থী সাংবাদিকদের সঙ্গে চা-চক্রে মিলিত হয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো আপস নেই। আপস করা মানে অন্যায়কে মেনে নেওয়া।’ এ সময় তিনি দাবি আদায়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান।
সূত্র জানায়, নির্দলীয় সরকারের দাবির প্রশ্নে বিরোধী দলের নেতা আগের মতো কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। দলের স্থায়ী কমিটি ও ১৮ দলীয় জোট নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার এ মনোভাব বুঝতে পেরে তাকে আন্দোলনের যে কোনো কর্মসূচি নেওয়ার একক ক্ষমতা দিয়েছেন। খালেদা জিয়াও এখন একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। দলীয় নেতাদের সঙ্গে নামমাত্র আলোচনা করেন। এছাড়া কর্মসূচি ঘোষণার আগে কোনোভাবেই তা যেন বাইরে প্রকাশ না হয়, সে ব্যাপারে বেশ সতর্ক খালেদা জিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৮ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা জানান, নির্দলীয় সরকার দাবিতে খালেদা জিয়াকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিবার্চন কমিশন যেদিন তফসিল ঘোষণা করবে, সেদিন থেকে অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন জোটের শরিকরা।
ঢাকায় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে আরও দীর্ঘ সময় অর্থাৎ চার থেকে পাঁচদিন একটানা হরতাল কর্মসূচি দিতে পারেন তিনি। এরপর অবরোধ কর্মসূচি। সেক্ষেত্রে প্রথমে রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দিরিপোর্টকে বলেন, ‘সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আমাদের আন্দোলনের পথেই হাঁটতে হচ্ছে। আন্দোলন ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা সংলাপের ব্যাপারে আন্তরিক নয়, কৌশল অবলম্বন করছেন। তারা মূলত একদলীয় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছেন। যা জনগণ কখনও মেনে নেবে না। জনগণের সঙ্গে নিয়ে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট একদলীয় নিবার্চন প্রতিহত করবে।’
(দিরিপোর্ট২৪/টিএস/এমএইচ/এনডিএস/এমএআর/নভেম্বর ১৭, ২০১৩)