বিএনপিকে ‘সর্বদলীয়’ সরকারে অংশগ্রহণের আহ্বান
দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজপথে প্রতিহিংসা, ধ্বংসাত্মক ও নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘৃণ্য রাজনীতির পথ পরিহার করে দেশকে ভালোবেসে ‘সর্বদলীয়’ সরকারে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা।
সোমবার রাতে জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ আহ্বান জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে এই আলোচনা শুরু করেন জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল। আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম।
সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে ‘সর্বদলীয় অন্তবর্তী সরকার’ নতুন অবদান। এ দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বিরোধী দলেরও উচিত সর্বদলীয় সরকারে অংশগ্রহণ করা। কতজন মন্ত্রী চান, কোন কোন মন্ত্রণালয় চান বিরোধীদলীয় নেত্রী বলুক।
বিরোধী দলের প্রতি আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে রাজপথে ককটেল-বোমা মেরে মানুষের প্রাণ সংহার না করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। আপনাদের সামনে দুটি পথ- একটি হলো বোমা-ককটেল ফাটিয়ে নিজেদের জনবিচ্ছিন্ন করা। অপরটি হলো জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকা। এটি করতে হলে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।
দফতরবিহীন মন্ত্রী আরও বলেন, আর কারোর জন্য কোনো অপেক্ষা নয়, নিজের দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচনে আসুন। নির্বাচনে না আসলে জনসম্পৃক্ততা হারাবেন। জনবিচ্ছিন্ন কোন দল টিকে থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো ‘একদলীয়’ নির্বাচন নয়, বহুদলীয় নির্বাচন করবে। ১৮ দলীয় জোটেরও অনেক রাজনৈতিক দল খালেদা জিয়ার সঙ্গত্যাগ করে নির্বাচনে আসবে। সবাইকে হারিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হবেন না। আপনারা নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন হবে না, ক্ষমতায় থাকতে পারবো না- এটি মনে করলে ভুল করবেন। জনগণের ভোটে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। আমরা অপেক্ষা করে থাকবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি বর্জন করে দেশকে ভালোবেসে নির্বাচনে ফিরে আসুন। সবার জন্য সমান অধিকার দিয়েই নির্বাচন হবে।
চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ নতুন মন্ত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই সংবিধান পবিত্র দলিল। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দল নির্বাচন প্রতিহতের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চান। সংসদে না এসে তারা সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন তারা গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। তারা অসাংবিধানিক স্বৈরাচারী সরকার চান।
মইনউদ্দিন খান বাদল পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, সোমবার একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন। সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে প্রধানমন্ত্রী বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন, গঠিত হয়েছে সর্বদলীয় সরকার।
জাতীয় পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অনেকে আছে সকালে এক কথা বিকেলে আরেক কথা বলেছেন। কিন্তু তারাও আজ উপলব্ধি করতে পেরেছেন নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। তারাও নির্বাচনে এসেছেন, সবাইকে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কয়টা পটকা ফুটালেন, বোমা ও পেট্টোল ঢেলে কয়টা মানুষ মারলেন- তার হিসাব করে সংসদের কোনো আইন পরিবর্তন হবে না। চাইলে সংসদেই করতে হবে। বিদেশীরাও অনুধাবন করছেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করলে তারা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।
ফজলে রাব্বি মিয়া নতুন মন্ত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে যাতে সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নতুন মন্ত্রীরা সফল হবেন। গণতন্ত্রকে হত্যা ও নির্বাচনকে বানচাল করতে চায় বিরোধীদলীয় নেত্রী। মানুষের রক্তে তিনি কেন গোসল করতে চান? রাজপথে রক্ত ঝরিয়ে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে কোনো কিছু আদায় হবে না। কিছু চাইলে তাদের সংসদেই আসতে হবে। হরতাল করে মানুষ খুন করছেন, এতে কী জনগণের কল্যাণ হচ্ছে? এখনও সময় আছে, আলোচনায় আসুন, কথা বলুন। সর্বদলীয় সরকারে বিরোধী দলের জন্য আসন সংরক্ষিত আছে। নাম দিন, শপথ নিন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বলেন, সর্বদলীয় মন্ত্রিপরিষদ এটি হয়নি। আশা করি আগামীতে হবে। এই মন্ত্রীদের কাছে জাতির প্রত্যাশা, দলীয় বিবেচনার উর্ধে উঠে দায়িত্ব পালন করবেন। সমগ্র জাতি চায় উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার আগুন জ্বলছে। প্রতিহিংসার দাবানলে দেশ আজ কুয়াশাচ্ছন্ন। দলীয় বিবেচনার পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থে কালক্ষেপণ না করে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসে সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ বের করার আহ্বান জানান তিনি।
(দিরিপোর্ট/আরএইচ/এইচআর/এসবি/এমডি/নভেম্বর ১৮, ২০১৩)