দিরিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে হলে পোশাক শিল্প কারখানার কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হচ্ছে। অর্থনীতির উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে তৈরি পোশাক রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ২০১১ সালে বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৪ দশমিক ৮ শতাংশের যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে এই হার ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে কারখানা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিল্পে কর্মপরিবেশের অবস্থা খুব নাজুক হয়ে পড়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এছাড়া, নাজুক কর্মপরিবেশের কারণে বাংলাদেশে কয়েকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা এই উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পায়। এছাড়া, অন্যদেশগুলো নিয়মিতভাবে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালেও ১৯৮৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে মাত্র তিনবার।

এদিকে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রের নাজুক পরিবেশের বিষয়টিকে বিশ্বের সামনে নিয়ে এসেছে।

তবে, এসব দুর্ঘটনার পর গত ছয়মাসে সরকার পোশাক শিল্প শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশের ব্যাপারে কিছু কার্যকরি পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও, বাংলাদেশের কারখানাগুলো নাজুক কর্মপরিবেশ দেশের জন্য এখনো বড়ো চ্যালেঞ্জ বলে ওই প্রতিবেদন সতর্ক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী দেশের দারিদ্রের হার কমেছে। তবে ২০১০ সালেও দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৬ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন দুই মার্কিন ডলারেও কম অর্থ উপার্জন করতো, যা এ উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম দৈনিক মাথাপিছু আয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি সমন্বিত শ্রম বাজার তৈরি ও সামাজিক রাজনৈতির সঙ্গে পরিচিত হতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না।

পোশাক শিল্প কারখানার দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হওয়ার এই ক্ষেত্রের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে পোশাক শিল্প কারখানার উন্নয়নের চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন। দ্বিতীয়ত, মজুরি নির্ধারণের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন। তৃতীয়ত, কর্মক্ষম মানুষের জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা। চতুর্থত, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণ।

এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উপমহাসচিব গিলবার্ট হুংবো বলেন, ‘এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আইএলও বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। গতমাসে বাংলাদেশের কারখানাগুলোর শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও আইএলও একটি প্রকল্প শুরু করেছে।’

বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থগুলো থেকে দেওয়া নিরাপত্তা নীতির সমন্বয় করাই ওই প্রকল্পের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ বলে জানান তিনি।

(দিরিপোর্ট/কেএন/জেএম/নভেম্বর ১৯, ২০১৩)