‘জনসমর্থনহীন’ বামরাও এখন মন্ত্রী
সাগর আনোয়ার, দিরিপোর্ট : গত সংসদ নির্বাচনে তিন শতাধিক ভোট পাওয়া বাম নেতাও এখন মহাজোটের মন্ত্রী। নির্বাচনী আসনে জনসমর্থন প্রায় শূন্যের কোটায় থাকা বাম নেতাদের অনেকেই এখন এমপি থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ সোমবারের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায়ও আছেন এক সময় জামানত হারানো ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
দেশে অনুষ্ঠিত নয়টি সংসদীয় নির্বাচনী ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত নয়টি নির্বাচনের কোনোটিতেই বামদলগুলো ক্ষমতার কাছাকাছিও আসতে পারেনি। এমনকি সামরিক শাসনের অধীনে নির্বাচন ছাড়া অনেক বাম নেতা নির্বাচিত হওয়ারও সুযোগ পাননি। তবে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছে তাদের। মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নিচ্ছেন তারা।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের ৮ম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বাম দলগুলো ক্ষমতার স্বাদ পায়নি। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পর কয়েকটি বাম দল ক্ষমতার কাছাকাছি আসে।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম সংসদ নির্বাচনে হাসানুল হক ইনুর জাসদ মশাল প্রতীক নিয়ে ৭৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতেও জয়ী হতে পারেনি। ইনুসহ তার দলের সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সেই জাসদ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩টি আসন লাভ করে। মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইনু হন তথ্যমন্ত্রী।
একইভাবে রাশেদ খান মেননের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি কাস্তে প্রতীকে ২০০১ সালের নির্বাচনে ৩২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছিল মাত্র .০৭ শতাংশ। জামানত হারিয়েছিলেন মেননসহ সব নেতা। সেই ওয়ার্কার্স পার্টি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মহাজোটের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২টি আসন লাভ করে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মেননকে বানানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। সর্বশেষ সোমবার তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও শপথ নিয়েছেন।
এর আগে মেনন ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান ও ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘নির্বাচনী সমঝোতার’ মাধ্যমে কাস্তে প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০০১ সালের ৮ম সংসদ নির্বাচনে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) চেয়ার প্রতীকে ৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মোট ভোট পায় ৯৭২টি। দিলীপ বড়ুয়া নিজে পান ৩১০ ভোট। আওয়ামী লীগের শরিক হওয়ার সুবাদে ৯ম সংসদে নির্বাচনে অংশ না নিয়েও টেকনোক্র্যাট কোটায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান দিলীপ বড়ুয়া।
আওয়ামী লীগের আরেক শরিক গণতন্ত্রী পার্টি ২০০১ সালের নির্বাচনে পায়রা প্রতীকে ১১টি আসনে অংশ নিয়ে ভোট পায় ৩১৯০টি। যা ছিল মোট ভোটের ০.০১ শতাংশ। গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি নুরুল ইসলাম নির্বাচনের আগে খুন হওয়ায় তার স্ত্রী কবি রুবি রহমান সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য পদ লাভ করেন। একইভাবে সংরক্ষিত আসনে মহিলা সংসদ সদস্য পদ লাভ করেন ন্যাপের আমেনা বেগম।
শপথ নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন দিরিপোর্টকে বলেন, ‘দেশের বর্তমান অবস্থায় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমি সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিয়েছি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’
মহাজোটে অংশগ্রহণ ও মন্ত্রী হওয়ার পর শ্রমিকশ্রেণির জন্য কি করতে পেরেছেন বা পারবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১৪ দলীয় জোট করেছিলাম। আমরা ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থ অনেক বেশি রক্ষিত হচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘সমাজতন্ত্রের জন্য কি করলাম বা কি করবো এসব প্রশ্ন করার সময় এখন না। ২০০১ সালের পর সারাদেশ জঙ্গিবাদ-মৌলবাদে ভরে গিয়েছিল। এখন আমাদের নতুন সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিয়ে যাওয়া।’
(দিরিপোর্ট/এসএ/এপি/জেএম/এইচএসএম/নভেম্বর ১৯, ২০১৩)