আলোর মুখ দেখছে না আদমজী পাটকল
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে খালিশপুর জুটমিল ও জাতীয় জুটমিল (সাবেক কওমী জুটমিল) চালু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সরকারের একাধিক মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে আদমজী পুনরায় চালু করার কথা জানান।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও আদমজী জুটমিল আবার চালু করার সুপারিশ করে। এ অবস্থায় আদমজীর ২ নম্বর ইউনিটটি আবারও চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এখানে প্রায় দুই হাজার কর্মী নিয়ে আধুনিক পাটকল চালুর প্রকল্পসম্বলিত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদমজী চালুর উদ্যোগটি ভেস্তে গেছে। সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পটির আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই।
আদমজী চালু করতে পাট মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান দিরিপোর্ট২৪কে জানান, এত আগের বিষয়ে আমি কিছু মনে করতে পারছি না। কাগজপত্র দেখতে হবে। আপনি পাট সচিবের কাছে খোঁজ নিন।
চারদলীয় জোট সরকার ২০০২ সালে আদমজী বিলুপ্ত করে পাটকলের জমি বেপজার কাছে হস্তান্তর করে। বেপজা সেখানে আদমজীনগর নামে একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন করে। বর্তমানে সেখানে ২৯৩ একর জমির উপর ৩০৭টি শিল্প প্লট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে ২নং ইউনিটের ১১ একর জায়গা এখনও অব্যবহৃত রয়েছে। এই জায়গাতেই সরকার নতুনভাবে আদমজী চালুর উদ্যোগ নেয়।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আদমজী ইপিজেডের অব্যবহৃত জমিতে নতুনভাবে পাটকল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়। পাট মন্ত্রণালয় বিজেএমসির পরিচালক (উৎপাদন) তরিকুল ইসলামকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি আদমজী চালুর বিষয়ে বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে তিনটি প্রস্তাব দেয়।
প্রথম প্রস্তাবে অব্যবহৃত ২ নম্বর ইউনিটের ১১ একর জমি অধিগ্রহণ করে এক হাজার তাঁতবিশিষ্ট বড় আকারে পাটকল প্রতিষ্ঠা, দ্বিতীয় প্রস্তাবে ৫০০টি তাঁত নিয়ে আদমজী নতুনভাবে শুরু করার কথা বলা হয়। এ জন্য নতুনভাবে কোনো জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না।
সর্বশেষ প্রস্তাবে ৮০টি স্পিনিং ফ্রেম ও ৫০টি তাঁত নিয়ে একটি কম্পোজিট পাটকল প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩০৭ কোটি টাকা। এতে প্রায় দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
মন্ত্রণালয় নানাদিক মূল্যায়ন এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মনে করে তৃতীয় প্রস্তাবটির ব্যাপারে ২০১০ সালের ৩০ মে সম্মতি দেয়। মন্ত্রণালয় ওই বছরের আগস্টে প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আশরাফুল মকবুল দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, আদমজী পাটকলের ২ নম্বর ইউনিটের ১১ একর জমির উপর পাটকল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ২০১০ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আমাদের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
কমিটির দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুনভাবে আদমজী চালু করতে প্রথম পর্যায়ে ১৪৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। উৎপাদনে যেতে সময় লাগবে তিন বছর। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা চালু রেখে ৫০ দশমিক ৭০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন করা যাবে।
কমিটি তাদের প্রতিবেদনে আরো জানায়, আদমজীর ২ নম্বর ইউনিটের দেয়ালসহ সব অবকাঠামো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। কোনো যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব নেই। পাটকলটি চালু করতে হলে নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণ করে আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে। এ জন্য দক্ষ শ্রমিক ও কারখানা-ব্যবস্থাপক প্রয়োজন। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
২০১০ সালের ১ জুলাই সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছিলেন, সরকার আদমজীসহ দেশের বড় বড় পাটকলগুলো আবারো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দিয়ে আদমজী চালু করা হবে।
ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, আদমজী নামে কোনো পাটকল চালু করা যাবে না। ভিন্ন নামে এটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে ৩০৭ একর জমির উপর এশিয়ার বৃহত্তম পাটকলআদমজী প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। ক্রমাগত লোকসান ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ২০০২ সালে পাটকলটি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
(দিরিপোর্ট২৪/আরএম/এমএআর/জেএম/অক্টোবর ১১, ২০১৩)