সেই শচিন ক্রিকেট খেলবেন!
দিরিপোর্ট ডেস্ক : ক্রিকেটকে লাল সালাম জানানো শচিন বলেছেন, এরপরও তিনি ক্রিকেটেই থাকছেন। বলেছেন, ‘ক্রিকেট ছাড়াটা খুব কঠিন; আমি আগেও বলেছি, ক্রিকেট আমার কাছে অক্সিজেনের মতো৷ কোথাও না কোথাও ঠিকই খেলব৷’ কিন্তু কথা হচ্ছে কিভাবে! শুনুন তার মুখ থেকেই। আরও থাকছে শচিন বিদায়ী ম্যাচে কি বলেছিলেন; কি বলতে পারেননি তা জানানোর চেষ্টা। ক্রিকেট ঈশ্বর শচিন টেন্ডুলকার প্রচার মাধ্যমে খোলামেলা-ই বলেছেন অনেক কথা। না; কোনও প্রশ্ন এড়িয়ে যাননি, ঘটেনি ধৈর্যচ্যুতিও৷ ভারতীয় মিডিয়ায় যা তুলে ধরা হয়েছে; তা থেকে চুম্বক অংশ আসুন আমরাও জেনে নিই-
শচিন টেন্ডুলকার ২০০তম ম্যাচ খেলেই টানা ২ যুগের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। মুম্বাইয়ে গত ১৪ নভেম্বর শেষ ম্যাচে ব্যাটে তুলেছেন ৭৪ রান। থেমে গেছে এক রান মেশিনের অব্যাহত সচল চাকা। শচিন নিজেই মূল্যায়ন করেছেন নিজের ক্যারিয়ার; বলেছেন, ‘ক্যারিয়ার, খুব অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা কঠিন৷ তবে সব সময় দেশের হয়ে খেলাটাই ছিল সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার৷ বিভিন্নরকম চ্যালেঞ্জ এসেছে, নানাভাবে তার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করেছি৷ স্বপ্নের মতো ছিল ব্যাপারটা৷ সঙ্গে পেয়েছি পরিবার-কোচ-বন্ধু-সহখেলোয়াড়দের৷ মাঝে মাঝে সত্যিই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আর ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলব না৷ ক্রিকেটকে ছাড়াটা খুব কঠিন হবে, আমি আগেও বলেছি, ক্রিকেট আমার কাছে অক্সিজেনের মতো৷ কোথাও না কোথাও ঠিকই খেলব৷’
অবসরে যাওয়ার আগে অনেক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শচিন; বলেছেন, ‘আমার অবসর নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই মিডিয়ায় চর্চা হচ্ছিল৷ কিন্তু আমি বলেছিলাম, যেদিন মনে হবে দেশের কাছে বোঝা হয়ে যাচ্ছি, সরে যাব৷ এখানে কী হয়, শরীর আপনাকে সঙ্কেত দেয়৷ বার্তা পাঠায়৷ আমার শরীর বলছিল, আর হচ্ছে না, কখনও কখনও ট্রেনিং করতে করতে মনে হত, এবার একটু বসি বা টিভি দেখি৷ আমাকে অনেক বেশি চেষ্টা করতে হত৷ সবাইকেই একদিন খেলা ছাড়তে হয়৷ আমার মনে হয়, ঠিক সময়েই খেলা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি৷ এই নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই৷ আমি সব সময় ভারতকে সমর্থন করব, প্রার্থনা করব দেশের জয়ের জন্য৷ তা সব সময় ক্রিকেট হতে হবে, তারও কোনও মানে নেই৷ ভারত সবার আগে আসবে, বাকি সব কিছু পরে।’
কথা বলতে হয়েছে ভারতরত্ন নিয়ে; শচিনের ভাষ্য, ‘আমি যখন খেলতে শুরু করেছিলাম, কখনও কোনও পুরস্কার বা কিছু পাওয়ার কথা ভাবিনি৷ যখন আমাকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছিলেন, যা আমার কাছে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল৷ এই পুরস্কার আমার মায়ের জন্য আমি উৎসর্গ করেছি। আমার জন্য মা যে আত্মত্যাগ করেছেন, তার সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা হয় না৷ আমাদের দেশে এমন লাখ লাখ মা আছেন, যাঁরা সন্তানের জন্য সর্বস্ব দিয়ে শুধুই আত্মত্যাগ করে যান৷ আর তা কোনওদিন বলেন না৷ আমি এই ভারতরত্ন পুরস্কার দেশের সেই সব মায়েদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই, যাঁরা সন্তানের জন্য শুধুই ত্যাগ করে গিয়েছেন।’
ক্রিকেটের নতুন প্রজন্ম নিয়ে শচিন বলেছেন, ‘আমার সব সময়ই নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে৷ ভারতীয় দলে ভুবনেশ্বর কুমারের মতো কেউ কেউ আছে, আমি যখন খেলতে শুরু করেছিলাম, জন্মায়ইনি৷ আমি মাঝে মাঝে রসিকতা করে ওদের বলতাম, আমি যখন ড্রেসিংরুমে ঢুকব, স্যার বলে ডাকবে৷ কিন্তু তা রসিকতাই৷ আমি সব সময় নতুন প্রজন্মের সঙ্গ উপভোগ করেছি৷ এই খেলায় সব সময় নতুন কিছু শেখা যায়৷ আমি তো নতুনদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি৷ শেখাটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ৷ আর পরের প্রজন্মের জন্য আমি সব সময় থাকব৷ কখনও অনূর্ধ্ব-১৯ ইন্ডিয়া টিমের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, কখনও বা রঞ্জি দলের সঙ্গে৷ ওদের সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগেছে, আনন্দ পেয়েছি৷’
বিশ্বকাপ জয় নিয়ে শচিনের আলাদা অনুভূতি, ‘যখন থেকে ভারতের হয়ে খেলতে শুরু করি, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, একদিন না একদিন বিশ্বকাপ জিতব৷ কাজটা যে সহজ নয়, জানতাম৷ সত্যি কথা বলতে কী, ২২ বছর লেগে গিয়েছে কাপ জিততে৷ ওটাই জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত৷ আর ক্যারিয়ারে হতাশাজনক মুহূর্ত ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়া৷ ওই বিশ্বকাপে খুব ভালো খেলেছিলাম আমরা, কিন্তু শেষ হার্ডলটা পেরোতে পারিনি৷ তা খুব ধাক্কা দিয়েছিল৷ অনেক সময় লেগেছিল ব্যাপারটা ভুলতে।’
শচিন তার শেষ ম্যাচ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ওয়াংখেড়েতে ম্যাচটা শেষ হওয়ার পরে মাত্র ২ বার আমার পক্ষে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়েছে৷ প্রথমবার, যখন ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে টিমমেটরা আমাকে ঘিরে ধরে গার্ড অব অনার দিচ্ছিল৷ সেটা সামলে নেওয়ার পরে দ্বিতীয়বার, যখন আমি পিচকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলাম৷ ওই বাইশ গজ আমার কাছে মন্দিরের মতো, আমি যা হয়েছি বা যেটুকু হয়েছি, সবই ওই ২২ গজের জন্য৷ সে জন্যই পিচকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম৷ কিন্তু ওখানে গিয়ে পিচের সঙ্গে কথা বলছিলাম আমি৷ একেবারে একা, মাঝখানে দাঁড়িয়ে৷ তখন আর নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না৷ মনে হচ্ছিল, আর কোনওদিন এখানে কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে আমি ভারতের হয়ে দাঁড়াব না৷ ওই সময় ঠিক কী অনুভূতি হচ্ছিল, বলে বোঝানো খুব কঠিন৷ ফেরার পথে যখন সবার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে হচ্ছে, আমি মাথা নীচু করেছিলাম৷ কারণ কাউকে বুঝতে দিতে চাইনি যে আমি কাঁদছিলাম৷ সে বড় কঠিন মুহূর্ত ছিল আমার জন্য।’
দেশি কোচ না বিদেশি কোচ কে বেশি প্রয়োজন তা ধর্তব্যের মধ্যে নেই শচিনের; বলেছেন, ‘বিষয়টা আমার কাছে এইরকম-ভালো কোচ৷ তিনি দেশি না বিদেশি, তাতে কিছু এসে যায় না৷ আসল কথা হল, টিমের কাজে তিনি লাগছেন কি না৷ এই পর্যায়ে যারা খেলছে, তারা সবাই জানে কী ভাবে কভার ড্রাইভ মারতে হবে৷ তার জন্য কোচের দরকার নেই৷ কোচের ভূমিকা হওয়া উচিত অনেকটা বন্ধুর মতো৷ যিনি ছোটখাটো ভুল শুধরে দিতে পারবেন৷ তার টিপস মাথায় রাখতে পারলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়৷’ সূত্র : পিটিআই, এএফপি।
(দিরিপোর্ট/এএস/সিজি/এইচএসএম/নভেম্বর ১৯, ২০১৩)