চিলমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা : ‘তথ্যই শক্তি’ এ স্লোগান দিয়ে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে কাজে আসছে না ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো।

উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্রের যে দু-তিনটি কেন্দ্র (ইউআইএসসি) চালু রয়েছে তা দু-চারটি সেবার মাঝে আটকা পড়ে আছে। সচেতনতা, প্রচার ও প্রচারণার অভাবে তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো কাজে আসছে না সাধারণ মানুষের।

অভিযোগ রয়েছে, এসব কেন্দ্রের সরবরাহ করা সরকারি সরঞ্জাম যথাযথ ব্যবহারের অভাবে বিকল হয়ে পড়ে আছে। ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গ্রামের সাধারণ মানুষ যাতে কম খরচে, কম সময়ে দেশ-বিদেশে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সুবিধা, কম্পিউটার কম্পোজ ও প্রিন্ট, ছবি তোলা ও স্ক্যানিং, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন ও মানবাধিকারসহ সেবা পেতে পারে সে লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব কেন্দ্রে স্বল্প খরচে ইন্টারনেট, কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোস্ট্যাট, ছবি তোলা ও স্ক্যানিংয়ের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও অল্প খরচের পরিবর্তে মনগড়া টাকা নেওয়া হচ্ছে। তথ্যসেবা কেন্দ্রের সেবার মূল্য নির্ধারণের মূল্য তালিকা দেওয়া হয়নি।

উপজেলার রাণীগঞ্জ পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, তথ্যসেবা কেন্দ্রে নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের ছোট একটি অফিস কক্ষে তথ্যসেবা কেন্দ্রটি চালাতে হচ্ছে। এ সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মুরাদ হোসেন জানান, এ তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে কম্পিউটার কম্পোজ এবং অনলাইনের কাজ করা হয়। কালার প্রিন্টার নষ্ট হওয়ায় ডিজিটাল ক্যামেরাটি অলস পড়ে আছে। ফটোস্ট্যাট মেশিন নেই।

থানাহাট ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র শুরুতে সচল থাকলেও পরে এ কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মাহবুবুর রহমান তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শ্যামলী ডিজিটালে এসব উপকরণ ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নয়ারহাট ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। এ তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মোছা. রুবি আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট সেবা না পেলেও তরুণ/তরুণীদের মোবাইল ফোনে গান ডাউনলোডের কাজ চলছে। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করা হলেও কেন্দ্রটি কালেভাদ্রে খোলা হয় বলে নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা রহিম শেখ (৩৫) জানান।

অষ্টমীর চর ও চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদসহ তথ্যকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। এ কেন্দ্রে মূল সেবার পরিবর্তে গান ডাউনলোড করা হয় মর্মে অনেকে অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে মানুষ ছবি তোলা ও ফটোস্ট্যাটের সেবা নিচ্ছে। নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে অনলাইনের কাজে সমস্যা হচ্ছে।

চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও অষ্টমীর চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ সোহরাব হোসেন একই কথা জানিয়েছেন।

(দিরিপোর্ট/আরইবি/এমএআর/নভেম্বর ২০, ২০১৩)