স্বৈরাচারের কাঁধে গণতন্ত্রের বোঝা
মতিনুজ্জামান মিটু : স্বৈরাচারের কাঁধে গণতন্ত্রের বোঝা চাপিয়ে মহাসংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে পেয়েছে দেশ। বিশ্ববেহায়া তার মতো লেজ কাটার জন্য বিরোধীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
১৯৮৩ সালের মার্চের কথা, নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে বসলেন পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা উর্দিধারী এক কর্মকর্তা। এসেই দেশের সংবিধান স্থগিত করে জারি করলেন জংলি আইন। হুংকার দিয়ে ঘোষণা করলেন, কেউ আকারে-ইঙ্গিতে অসভ্য শাসনের বিরোধীতা করলে সাত বছরের জেল হবে তার। কোন রক্তপাত ও সহিংস ঘটনা ছাড়াই সংঘটিত হয় ওই জংলি অভ্যুত্থান। পরদিন গণতন্ত্রের পুজারি বলে খ্যাত দেশের একটি বাংলা দৈনিকে ফলাও করে অভ্যুত্থানের গুণবন্দনা ছাপা হয়।
মহাপ্রলয়ে ঘাড় বাধিয়ে দেওয়ার প্রতিদানে একজন মন্ত্রী থাকা সত্বেও, মহাজোটের প্রধান শরীক এই দলটির ভাগ্যে আরো চারজন পূর্ণ এবং দুজন হাফ মন্ত্রী জুটেছে। দেশের রাজনীতির আকাশে তাকে নিয়ে রবি, সোম ও মঙ্গলবার সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। সম্প্রসারিত মহাজট সরকারে পূর্ণ ও আধা মিলিয়ে হাফ ডজন মন্ত্রী বাগিয়ে মহাজট থেকে বেরিয়ে আসার হাস্যকর ঘোষণা দিয়েছেন হালের রাজনীতির এই ব্যবসায়ী।
এই পতিত রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বের দাবিদার দলটির মিত্রতা আজকের নয়। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, এক মঞ্চে হোক আর আলাদা মঞ্চে হোক, সদরে হোক আর নেপথ্যে হোক, তাদের মিত্রতা তিন দশকেরও বেশি সময়ের। তারা সব সময়ই একে অপরের পাশে থেকেছেন।
ছাত্র-জনতার চাপে রাজপথের আন্দোলনে থাকলেও ১৯৮৬ সালে স্বৈরশাসকের আহবানে সাড়া দিয়ে উপমহাদেশের অন্যতম পুরানো এই দলটি জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পরিণতিতে দেশের মানুষ আরো ছয় বছর বর্বর আইনের যাতাকলে পিষ্ট হয়। এতোদিন আড়ালে ছিলো এবার সামনে আসলো, দু-যুগের বেশি সময়ের লিলা উদ্ভাসিত হলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনকে ঘিরে গড়ে উঠলো মহা এক জট।
ক্ষমতার রঙমঞ্চের পাঁচ বছরের মান-অভিমানের মহড়ায় হতবাক সচেতন মহল। এই সময়ে খুঁটি ঠিক রেখে মহাজটের ইতি টেনেছেন তিনি। চিরায়ত অভ্যাস তিনি আজো বজায় রেখেছেন। এ দেশে দীর্ঘকাল ধরে চর্চিত তরিকাওয়ালাদের খাস মুরিদ তিনি। একই ঘরানায় সম্পর্কিত ধূর্তরা মিলেমিসে বাঙ্গালীদেরকে হাইকোর্ট দেখিয়েছে। কিন্তু এতে তারা কতটুকু সন্তুষ্ট হতে পেরেছে তা সময়ই বলে দেবে।
(দিরিপোর্ট২৪/এম/এমএআর/নভেম্বর ২০, ২০১৩)