রাজু হামিদ, রানা হানিফ দিরিপোর্ট : প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে দা-কুমড়া সম্পর্ক বিদ্যমান রেখেই শেষ হলো নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন। বর্তমান সরকারের মেয়াদে স্বাভাবিক নিয়মে এরপর আর কোনো অধিবেশন বসবে না। তবে বহাল থেকে যাচ্ছে সংসদ।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বুধবার রাত ৮টা ২৩ মিনিটে অধিবেশন সমাপ্তি বিষয়ক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের নির্দেশনাপত্র পাঠ করে অধিবেশনের ইতি টানেন। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৭২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধিবেশন সমাপ্ত করেন।

এর আগে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমে সরকার পরিচালনা অব্যাহত রাখা হবে।’

প্রসঙ্গত, আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ বহাল থাকবে। তবে স্বাভাবিক নিয়মে এ সময়ে কোনো অধিবেশন বসবে না। দেশে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির উদ্বেগ ঘটলে রাষ্ট্রপতি ফের অধিবেশন ডাকতে পারবেন।

অধিবেশনের সমাপনী দিনেও উপস্থিত ছিলেন না প্রধান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। অনুপস্থিত ছিলেন মহাজোট থেকে সদ্য পদত্যাগী জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারাও।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ১৯তম অধিবেশনের শেষ দিনে নবম জাতীয় সংসদ ৪১৮ কার্যদিবসের মাইল ফলক স্পর্শ করলো। এর আগে কেবল পঞ্চম সংসদ ৪শ’ কার্যদিবস সম্পন্ন করে। ওই সংসদের মেয়াদকাল ছিল ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

এ সর্বোচ্চ কার্যদিবসে বিরোধী নেতা বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ কার্যদিবস। আর দলগতভাবে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বর্জন করেন ৩৪২ কার্যদিবস। উপস্থিত ১০ দিনে বিরোধীদলীয় নেত্রী মোট ৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট বক্তব্য দেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিরোধী জোটের এ বর্জনের শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদের শুরুর দিন থেকেই। আসনবিন্যাস নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত পৌনে পাঁচ বছরে এ দাবির সঙ্গে আরও অনেক দাবিই যুক্ত হয়। বিরোধী জোটের সবশেষ দাবি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল। সেই বিরোধ দা-কুমড়া সম্পর্কে রূপ নিয়ে শেষ হলো শেষতম অধিবেশন।

বিএনপির দাবি, গত পৌনে ৫ বছরে তাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি। সাবেক স্পিকার (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েও কার্যকর সমাধান করতে পারেননি।

নবম জাতীয় সংসদ রেকর্ড গড়েছে আইন পাসের ক্ষেত্রেও। গত পৌনে ৫ বছরে মোট আইন পাস হয়েছে ২৭১টি। এরমধ্যে বেসরকারি বিল ছিল তিনটি। এর আগে সপ্তম সংসদের ৩৮২ কার্যদিবসে ১৯১টি আইন পাস হয়। সেবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ।

এছাড়া নবম জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো নারী স্পিকার দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। এবারই প্রথম জাতীয় সংসদে একজন হুইপ নারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ৪১৮ কার্যদিবসে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত তিন হাজার ৪৯৩টি প্রশ্নোত্তর অধিবেশনে উত্থাপণ করা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৯৩টির জবাব দেন। আর বিভিন্ন মন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য ৬০ হাজার ১৪৭টি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তারা ৩২ হাজার ৬৮৮টি প্রশ্নের জবাব দেন।

এছাড়া ৭১ বিধিতে ৯ হাজার ৬৫৬টি নোটিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪৭৪টি গৃহীত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে ৩০২টি নোটিশ নিয়ে। অন্যদিকে ৭১ (ক) বিধিতে দুই মিনিট করে ৪৪ ঘণ্টা ২ মিনিট। এছাড়া বিরোধী দল ২৯টি মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

নবম জাতীয় সংসদেই সংশোধন করা হয় বহুল আলোচিত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। এর মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি। এছাড়া মাত্র চার মিনিটে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দু’ভাগে বিভক্তি, দুদক বিল, সন্ত্রাস দমন বিল, গ্রামীণ ব্যাংক বিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এমিডমেন্ট অ্যাক্ট, শ্রম আইন, পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিল, ডিমিচুয়ালাইজেশন বিল, আরপিও সংশোধন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল দায় মুক্তি বিল, মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বিল, কোম্পানি আইন, তথ্য অধিকার আইন, নিরাপদ খাদ্য বিল, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস হয়।

(দিরিপোর্ট/আরএইচ/এইচআর/এনডিএস/নভেম্বর ২০,২০১৩)