কামরুননাহার, দিরিপোর্ট ডেস্ক : শিশু মৃত্যু হার কমানো, গড় আয়ু বৃদ্ধি ও রোগ নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্য খাতে ব্যতিক্রমী অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। গবেষকরা বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান। খবর রয়টার্সের।

রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দারিদ্র্য কিংবা প্রাকৃতিক অথবা মানুষসৃষ্ট দুর্যোগের মতো বিষয়গুলোর জন্য বারবার আলোচনায় আসে। তবে, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই গবেষণায় বাংলাদেশকে ‘অসাধারণ সাফল্যের গল্প’ ও ‘বিশ্বস্বাস্থ্যের একটি বড় রহস্য’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

দ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশতাক চৌধুরী। তিনি জানান, গত ৪০ বছরে বিশেষজ্ঞদের ধারণাকে পাল্টে দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালের তুলনায় প্রসূতি মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। ১৯৯০ সালের তুলনায় শিশু মৃত্যুর হারও প্রায় অর্ধেক কমেছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে ৬৮.৩ বছর। সেখানে পাশের দেশ ভারতে ৬৭ বছর ও পাকিস্তানে ৬৬ বছর।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের অগ্রগতির ব্যাপারে উদাহরণ হিসেবে টিবি ভাইরাসসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ প্রতিরোধে সাফল্যের কথা বলা হয়েছে। এসব রোগ প্রতিরোধে ভারত দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপক কার্যক্রমের ফলে যক্ষা রোগ আরোগ্যের হার ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশে। এই রোগে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ আরোগ্যের হার।

এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে দ্বারে দ্বারে জন্মনিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পরামর্শ ও সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশ জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে, যা পাশের দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

তবে, দারিদ্র্য ও নগরায়নের কারণে সৃষ্ট কিছু রোগ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন এই অগ্রগতির ওপর একটি কালো ছায়া ফেলেছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

বিশ্বের অপুষ্টির শিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের প্রায় অর্ধেক শিশু দীর্ঘস্থায়ীভাবে অপুষ্টিতে ভোগে। এছাড়া দেশটির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র‌্য সীমার নিচে বাস করে। মাথাপিছু আয়ের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্যতা রয়েছে বলে জানান গবেষণায় অংশ নেওয়া আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) কর্মরত অধ্যাপক আব্বাস ভূঁইয়া।

তবে গবেষকরা জানিয়েছেন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে আনুমানিক আট লাখের মতো চিকিৎসক ও নার্সের সংকট রয়েছে।

(দিরিপোর্ট/কেএন/এমডি/এইচএসএম/নভেম্বর ২১, ২০১৩)