দিরিপোর্ট প্রতিবেদক ; ‘বেলা অবেলা সারাবেলা’ অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসছেন খোন্দকার নূরুল আলম। আসাদুজ্জামান নূরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি শনিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে প্রচার হবে দেশ টিভিতে।

খোন্দকার নূরুল আলম বাংলা সঙ্গীতের একজন কিংবদন্তি শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক। তার গান মানেই শ্রোতাদের কাছে ভালো লাগার এক ভিন্ন আবেশ। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৭ আগস্ট ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলার ধুবড়ী মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নেসারউদ্দিন খোন্দকার ও মা ফাতেমা খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। ১৯৪৮ সালে ১২ বছর বয়সে মাকে হারান। একই বছর পুরো পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে চলে আসে।

খোন্দকার নূরুল আলম ১৯৫৪ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ও জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছিলেন তিনি। ছেলেবেলায় সাঁওতালি সুর আর বীণের আওয়াজ তাকে নাড়া দিত ভীষণভাবে। আর ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর সঙ্গীতই হয়ে উঠেছিল তার প্রধান আকর্ষণ। এরই মধ্যে ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ১৯৫৯ সালে তিনি রেডিওর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে তিনি ‘হিজ মাস্টারস ভয়েস’ গ্রামফোন কোম্পানির সঙ্গে সুরকার হিসেবে যোগদান করেন। বিটিভির জন্মলগ্ন থেকেই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

‘ইস্ ধরতি পার’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি চলচ্চিত্র মাধ্যমে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে ‘অন্তরঙ্গ’ও ‘যে আগুনে পুড়ি’ বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সে সময় ‘যে আগুনে পুড়ি’ চলচ্চিত্রের ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর আর থেমে থাকেননি, স্বাধীনতার পর ‘ওরা এগারোজন’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ ছাড়া অসংখ্য বিখ্যাত ছবিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেছেন। তার মধ্যে সংগ্রাম, জলছবি, দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শুভদা, বিরাজ বৌ, পদ্মা মেঘনা যমুনা, শঙ্খনীল কারাগার অন্যতম।

চলচ্চিত্র ছাড়াও আধুনিক গান, দেশের গান, বিখ্যাত কিছু কবিতায় সুরারোপ করেছেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয় ক্রীড়া সঙ্গীত, আনসার-ভিডিপি দলের সঙ্গীত, স্কাউট মার্চ সঙ্গীত, রোটারি ক্লাবের বাংলা ও ইংরেজি গানের সুরকার তিনি। গান লেখা এবং বিভিন্ন সময় গানের স্বরলিপি ও স্টাফ নোটেশন করার কাজও করেছেন খোন্দকার নূরুল আলম।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন খোন্দকার নূরুল আলম।

১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের মেয়ে কিশ্ওয়ার সুলতানার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্ত্রী-ছেলেমেয়ের সঙ্গে বাড়িতেই বেশি সময় কাটান কিংবদন্তি শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক খোন্দকার নূরুল আলম ।

বেলা অবেলা সারাবেলা অনুষ্ঠানে খোন্দকার নূরুল আলম তার যাপিত জীবনের বিভিন্ন কথা তুলে ধরবেন। এ ছাড়াও থাকবে তার বিগত দিনের সব কাজ, বর্তমান অবসরের ফুটেজ, তারকার কাছের মানুষদের মন্তব্য।

(দিরিপোর্ট/আইএফ/এএস/নভেম্বর ২১, ২০১৩)