দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা না করে যদি তফসিল ঘোষণা করা হয় তাহলে সেদিন থেকেই বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

একইসঙ্গে তিনি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে রবিবার সারাদেশে উপজেলা, থানা ও পৌরসভা পর্যায়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালনের ঘোষণা দেন।

অসাংবিধানিকভাবে ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠনের প্রতিবাদ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার বিকেলে ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমাদের বিকল্প পথ নেই। ঢাকাবাসীকে আহ্বান করব এ জুলুমবাজ, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসুন।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আরেকবার সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভঙ্গ করে দিয়ে তাদের পুরোনো স্বপ্ন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করতে এগিয়ে চলেছে। দেশের সবাই বলছেন প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্চাচারিতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে বাংলাদেশের মানুষকে অপমান করেছে। এটা শুধু বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোটের কথা নয়, দেশবাসীর কথা।’

ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনকালীন যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে, তা সব দিক দিয়ে অনৈতিক।এ মন্ত্রিসভার সরকার পরিচালনা করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। অনেক অপেক্ষা ও ধৈর্য ধরেছি। সরকারকে বার বার আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের কথা বলেছি। আওয়ামী লীগ জানে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা জয়ী হতে পারবে না। তাই তারা তত্ত্বাবধায়ক দিতে ভয় পাচ্ছে। ক্ষমতায় থেকে যারা দুঃশাসন ও দুর্নীতি করেছে একদিন তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ সরকার সম্পূর্ণভাবে জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলেছে। দেশের মানুষ অনেক ধৈর্য ধরেছে, এখন আর সময় নেই। জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছেন এবং তাকে বলেছেন, সরকার সংলাপ ও অলোচনায় বসুক। রাষ্ট্রপতি এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতেই পারেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সংসদে গিয়ে বলে দিলেন রাষ্ট্রপতি নাকি তাকে সরকার গঠনের অনুমতি দিয়েছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন লেজুড়বৃত্তি হয়ে গেছে। তারা একের পর এক আইন তৈরি করছে। যা কেবল আওয়ামী লীগকেই সাহায্য করবে, অন্য কাউকে নয়।’

সব দ্বিধা ভুলে রাজপথে নামতে নেতাকর্মীসহ ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই। এ সরকার গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে।আমাদের মিছিল মিটিং করতে দেওয়া হচ্ছে না।বিরোধী দলের অফিস পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ সরকার স্বৈরাচারী, জুলুমবাজ ও অবৈধ। তাদের সরে যেতে বাধ্য করতে হবে।’

এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের একটাই কথা, নির্দলীয় সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। আমরা সরকারে থাকাকালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো গুলি করিনি। কিন্তু এ সরকার আমাদের প্রতিটি আন্দোলন কর্মসূচিতে গুলি চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যতই লাফালাফি করুক, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ আপনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারবেন না।’

পঙ্কজ শরণকে উদ্দেশ্য করে আব্বাস বলেন, ‘পঙ্কজ শরণ আপনি এরশাদের বাসায় ও নির্বাচন কমিশনে যান আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষায়। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য কোনো কাজ করেন না । বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্র বানাতে চান। আমরা আমাদের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করব।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ক্রান্তিলগ্ন পার করছে। এর জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘যেদিন তফসিল ঘোষাণা করা হবে সেই দিন থেকে লাগাতার হরতা, আবরোধ চলবে। এর পর থেকে দেশ শেখ হাসিনার কথায় চরবে না। দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়।’

জামায়াত নেতা শফিকুর ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘নিজামীকে যদি ১ সেকেন্ডের শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে ৫৫ হাজার বর্গমাইল জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘কাদের মোল্লার রায় নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে।’ বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে আপনারা অবৈধ হয়ে যাবেন। আপনাদের আমরা নিরাপত্তা দিতে পারব না। ’

পুলিশ বাহিনী, বিজিবির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের শত্রু নন। বুঝে শুনে কাজ করবেন।’

বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বরকত উল্লাহ বুলু, নাজিম উদ্দিন আলম, জাফরুল হাসান চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, মনির হোসেন, জামায়াতের অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, ড. আব্দুল কাদের, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনডিপির গোলাম মোর্তুজা প্রমুখ।

(দিরিপোর্ট/টিএস /এমএইচ/এনডিএস/এমডি/নভেম্বর ২২, ২০১৩)