বাংলাদেশ-ডেনমার্কের যৌথ অর্থায়নে কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি
জোসনা জামান, দিরিপোর্ট : কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশকে অনুদান দিচ্ছে ডেনমার্ক। সেই অর্থের ৩২৪ কোটি ও সরকারের নিজস্ব তহবিলের ১০৮ কোটিসহ মোট ৪৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা, কৃষি উৎপাদন ও কর্মসংস্থান নামের এ কর্মসূচি দেশের ৬১ জেলার ৩৭৩ উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ড. শামসুল আলম দিরিপোর্টকে বলেন, ‘৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্ণিত নীতি অনুযায়ী বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করে এ কর্মসূচি জমির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শস্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠির সহায়ক, পরিবেশবান্ধব এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে যা কৃষি সংশ্লিষ্ট সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, অনুদানের বিষয়ে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত সম্মতি দিয়েছে ডেনমার্ক। কর্মসূচিটি একনেকে অনুমোদনের পরই অর্থছাড়ের বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কর্মসূচিটি জাতীয় কৃষি নীতি ও নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি বাস্তবায়িত হলে কৃষকদের খামারের কার্যপরিধি বিস্তৃত হবে। তাদের পরিবারের পুরুষ ও নারী সদস্যদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বাৎসরিক আয় বাড়বে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষাণীরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারবে, যা পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মসূচির আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার ওপর কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালনার জন্য কারিকুলাম ও প্রশিক্ষণ মডিউল এবং প্রশিক্ষণার্থী কৃষকদের জন্য সহজবোধ্য লেখা ও ছবি সম্বলিত প্রশিক্ষণ সহায়িকা প্রণয়ন, কৃষক মাঠ স্কুল বাস্তবায়নের জন্য ২০০০ জন কৃষক প্রশিক্ষক ও ১৮০০ জন বিভাগীয় প্রশিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম পরির্দশন ও পরিবীক্ষণের জন্য ১৫০০ জন বিভাগীয় কর্মকর্তার ওরিয়েনটেশন প্রদান, ২০ হাজারটি কৃষক মাঠ স্কুল বাস্তবায়ন করে ১০ লাখ কৃষক ও কৃষাণীর সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কৃষক সংগঠনের নেতাদের জন্য প্রশিক্ষণ কারিকুলাম ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন, মাঠ পর্যায়ের ৩৫০০ জন বিভাগীয় কর্মকর্তার কৃষক সংগঠনের মাধ্যমে কৃষি পণ্যের ব্যবসা পরিচালনা শীর্ষক প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রদান, ১০৬২টি কৃষক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে সংগঠনের নেতাদের কৃষি ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, জাতীয় পর্যায়ে সংলাপের লক্ষ্যে ৩০টি আলোচনা অনুষ্ঠান ও ২০টি যৌথ মাঠ পরিদর্শনের আয়োজন করা, প্রকল্পের ফলাফল মূল্যায়নের জন্য মধ্যমেয়াদি ও চূড়ান্ত জরিপ পরিচালনা এবং বাস্তবায়নকালে অবিরাম অগ্রগতি পরিবীক্ষণ করা, কৃষকদের জন্য সময়োপযোগী সঠিক প্রযুক্তি অনুসন্ধানে গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান এবং সফল প্রযুক্তি তথ্য প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমে প্রচার করে দেশের সব কৃষকের সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।
(দিরিপোর্ট/জেজে/এনডিএস/নভেম্বর ২২,২০১৩)