মাহমুদুল হাসান, দিরিপোর্ট : চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংলাপের ব্যাপারে ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকরা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার গায়ের জোরে সংবিধান পরিবর্তন করেছে। আওয়ামী লীগের অ্যাকশনের ওপর বিএনপির রিঅ্যাকশন হবে। তাদের মতে, বর্তমান সরকারের দমন-নিপীড়নের মধ্যে আন্দোলন চালানো কষ্টকর হলেও বিএনপির জন্য অসাধ্য নয়। কর্মসূচি আসবে সময় মতো।

এদিকে সেনাকুঞ্জে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকট এড়াতে আলোচনা শুরুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের প্রতি আহ্বান জানান। তবে সংলাপের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বলে জানান মির্জা ফখরুল। এরপর থেকে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের আলোচনা হতে পারে বলে গুঞ্জন চলছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সন্ধ্যার পর বনানীর কোনো এক নেতার বাড়িতে আশরাফ-ফখরুলের সংলাপ হয় বলে গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়।

এ খবর শুনে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন গণমাধ্যম কর্মীরা। এর আগে রাত ৮টার দিকে মির্জা ফখরুল চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন।রাত সাড়ে আটটার দিকে কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনেই রাত ১২টার পর ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশবাসীর সঙ্গে আপনারাও অধীর আগ্রহ করছেন একটি সংলাপের জন্য।কিন্তু আমি আপনাদের খুশি করতে পারলাম না । কারো সঙ্গে কোনো সংলাপ হয়নি। জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য একটি বিশেষ মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ কাজটি করেছেন। হুইচ ইজ টোটালি বেজলেস।’

এছাড়া দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদও সংলাপের ব্যাপারটি অস্বীকার করেন।

চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে শনিবার রাতে উপস্থিত কয়েক জন সাংবাদিককে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি মনে করি কর্মসূচি যাই দেওয়া হোক না কেন? দেশের মানুষ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে এবং বর্তমান সরকারকে বাধ্য করবে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আগামীতে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে।’

বিএনপির চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আওয়ামী লীগের গতি প্রকৃতি ও দমন-পীড়ন খেয়াল করছি। ইতোমধ্যে দেশবাসীও জেনে গেছে আওয়ামী লীগ কতটুকু দমন চালাতে পারে। কেবল দলীয় নেতাকর্মীই নয়, আওয়ামী লীগের কারণে দেশের জনগণ অস্থির হয়ে পড়েছে। তাই আমরা মনে করি, জনগণ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে এবং থাকবে।’

সরকার যতই দমন-পীড়ন চালাক না কেন আন্দোলন চালানো বিএনপির জন্য অসাধ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রধান, চেয়ারপারসন যখনই কর্মসূচি ঘোষণা করবেন আন্দোলন তখনই চূড়ান্ত হবে।’

আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা দলীয় ফোরামে বসে নির্ধারিত হবে এবং সময় মতো জানানো হবে। আওয়ামী লীগের অ্যাকশনের ওপর বিএনপির রিঅ্যাকশন হবে ।’

‘সারা দেশে আন্দোলন জমলেও ঢাকায় জমছে না’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঢাকার আন্দোলনের ব্যাপারে আমি একেবারে হতাশ নই এমনকি নিরাশও নই।ঢাকা যে একেবারে পারছে না তা নয়। হচ্ছে না হচ্ছে না করে দেখবেন ঢাকাতেও একদিন আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।’

এরশাদ ও হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্বে যখন আন্দোলন করেছি তখন ছিল পুলিশের এক ধরনের আচরণ আর আজ সরাসরি গুলির আচরণ করা হচ্ছে। সে দিন আন্দোলন দমাতে পুলিশ বড় জোড় লাঠি, গরম জল, রাবার বুলেট, সর্বোচ্চ টিয়ারশেল ব্যবহার করতো। আর এখন রাস্তায় নামলেই গুলি করে দেয়।’

আন্দোলন জোরদার করতে নাকি ঢাকাকে ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা সর্ম্পূণ একটি অসত্য কথা। আপনারা জানেন ঢাকায় একটি পরিপূর্ণ কমিটি রয়েছে। তা ছাড়া তাদের অধীনে আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্য যারা আছি তাদের কাজ করার প্রশ্নই আসে না। ঢাকার জনগণ ইতোমধ্যে বর্তমান সরকারের প্রতি ক্ষিপ্ত । তাই আমরা মনে করি ঢাকাবাসী সময় সুযোগ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

হরতালে রাস্তায় গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুর প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা যখন রাস্তায় আন্দোলন করে এরশাদের পতন ঘটিয়েছি। আন্দোলন করে একসময় শেখ হাসিনাকে কাত করেছি। একসময় তার সঙ্গে করেছি আবার এক সময় তার বিরুদ্ধে করেছি। তখনও হরতালের নামে রাস্তায় গাড়ি পোড়ানো বিএনপি ও আমি সমর্থন করিনি আজও করি না। তাহলে বলতে পারেন গাড়ি পোড়ায় কারা? আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই গাড়ি পোড়ানো সরকারের কাজ। সরকারের লোকজন এ কাজ করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপায়।’

এ সময় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এমএ মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি মনে করে থাকেন এক দলীয়ভাবে নির্বাচন করবেন। তাহলে আমি বলতে চাই এরশাদ সাহেবও চেয়েছিলেন কিন্ত গণঅভূত্থানে উড়ে গেছেন। শেখ হাসিনাও উড়ে যাবেন।’

সরকার জোর করে ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে নিজেদের সুবিধার্থে সংবিধান পরিবর্তন করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘আমি মনে করি সরকার যদি জনগণের দিকে তাকিয়ে অনুধাবন করেন। জন সমর্থন নিয়ে চিন্তা করেন জনগণ কি চায়? তাহলে সরকার শেষ মুহূর্তে হলেও দলীয়ভাবে নির্বাচনের চিন্তা থেকে সরে আসবেন।’

এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি টেলিভিশনের স্কলে দেখেছি। সঠিক জানি না, যদি হয় তাহলে অবশ্যই এটা ভালো কিছু বয়ে আনবে।’

উল্লেখ্য, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এরমধ্যে ১৮ দলীয় জোট ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেই সেইদিন থেকেই দেশে অচলের হুমকি দিয়ে রেখেছে।

(দিরিপোর্ট/এমএইচ/এনডিএস/নভেম্বর ২৪, ২০১৩)