দার্শনিক বারুখ স্পিনোজা
দিরিপোর্ট ডেস্ক : ওলন্দাজ দার্শনিক বারুখ স্পিনোজা বা বেনেডিক্ট ডি স্পিনোজা ১৬৩২ সালের ২৪ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্ম, দর্শন ও রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে তিনি লিখেছেন। আধুনিক বুদ্ধিবাদী ধারার দার্শনিকদের অন্যতম তিনি। সর্বেশ্বরবাদী দর্শনের জন্য তিনি বিখ্যাত। যুক্তিবাদী অবস্থানের কারণে নিজ সম্প্রদায় থেকে বিতারিত হন ও নিঃসঙ্গ অবস্থায় জীবনযাপন করেন।
স্পিনোজা এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের কয়েক শতাব্দী আগে স্পেনে তার পূর্বপুরুষদের খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়। তার বাবা-মা পর্তুগিজ ইনকুইজিশন থেকে বাঁচার জন্য নেদারল্যান্ডসে পালিয়ে আসেন। এ সময় তারা ইহুদি ধর্মে ফিরে আসেন। অনেকে মনে করেন এইসব ঘটনার ছাপ স্পিনোজার দর্শনচর্চায়ও পড়ে।
ব্যবসায়ী বাবার ছেলে হিসেবে বেড়ে উঠার জন্য সব ধরনের সুবিধা পেয়েছিলেন তিনি। ১৬৩৯ সালে আমস্টারডামে ইহুদিদের স্কুলে তার পড়াশোনা শুরু। সেখানে মূলত ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হতো। এরপর তিনি ইহুদি দার্শনিক ও কাব্বালা নামের মরমীবাদের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি পারিবারিক স্প্যানিশ ভাষা ছাড়াও লাতিন, পর্তুগীজ, ইতালীয়, ওলন্দাজ ও ফরাসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
ওই সময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক ও পণ্ডিত ফান ডেন এন্ডেনের কাছে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পাঠ নেন। তার মাধ্যমেই তিনি জিওর্দানো ব্রুনো ও রেনে দেকার্তের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে বিখ্যাত দার্শনিক ও বিজ্ঞানী গটফ্রিড লাইবনিজ ও হেনরি অলডেনবুর্গ তার সঙ্গে দেখা করেন।
প্রাথমিককালে ইহুদি সমাজ তাকে নানা সুবিধা দেয়। সে সময় অনেকে ধারণা করেছিল স্পিনোজা হবেন ইহুদিদের অন্যতম দার্শনিক। কিন্তু যুক্তিবাদিতার কারণে নিজ সম্প্রদায় থেকেই বিতারিত হন। তাকে রীতিমত অভিশপ্ত ঘোষণা করা হয়।
১৬৫৬ সালে তাকে সিনাগগ থেকে কোন ধরনের সাহায্য দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই ঘটনার পর তিনি ছোটবেলার নাম বারুখ পরিবর্তন করে এই শব্দেরই লাতিন প্রতিশব্দ বেনেডিক্টাস রাখেন।
এরপর থেকে স্পিনোজা আমস্টারডামে নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করতে থাকেন। এ সময় তার পেশা ছিল চশমার কাঁচ পরিষ্কার করা। চার বছর তিনি এই পেশা নিয়েই আমস্টারডামে বসবাস করেন। এরপর হেগ শহরে চলে আসেন। কয়েকটি বিখ্যাত বই প্রকাশের কারণে ১৬৬০ এর দশকের প্রথম দিকে স্পিনোজার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬৭০ সালে প্রকাশিত ট্র্যাকটাটাস থিওলোজিকো-পলিটিকাস বইয়ের জনপ্রিয়তা এবং গুরুত্ব লক্ষ্য করে তাকে হাইডেলবুর্গ ইউনিভার্সিটি দর্শন বিভাগের অধ্যাপক পদে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। তবে শর্ত দেয়া হয় প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিরুদ্ধচারণ না করলে তাকে শিক্ষাদানের ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হবে। কিন্তু তিনি এই আহ্বান সাড়া দেননি।
দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে ট্র্যাকটাটাস থিওলোজিকো- পলিটিকাস বইটি এতোটাই উদারনৈতিক ছিল যে, নেদারল্যান্ডের মতো সহিষ্ণু দেশেও তাকে এটি ছদ্মনামে প্রকাশ করতে হয়েছিল। বইটিকে সরকার নিষিদ্ধ করে। ইহুদি ও ক্যাথলিক মহলে বিরোধিতার সম্মুখীন হলেও বইটি শিক্ষিত ও মুক্ত সমাজে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
মুঘল ভারতে দারা শিকোর উদ্যোগে তার বেশ কয়েকটি বই ফারসিতে অনুদিত হয়।
তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে কর্তে ভারহ্যান্ডেলিং ভন গড, ডে মেন্স এন ডেসযেল। ওয়েলস্টান্ড (১৬৬০, ইংরেজিতে এ শর্ট ট্রিটিজ অন গড, ম্যান এন্ড হিজ ওয়েল-বিয়িং), প্রিন্সিপিয়া ফিলোসোফিয়া কার্তেসিয়ানা (১৬৬৩, ইংরেজিতে দি প্রিন্সিপলস অব কার্তেসিয়ান ফিলোসফি) ও এথিকা ওরডিনে জিওমেট্রিকো ডেমোসট্রাটা (১৬৭৭, ইংরেজিতে দি এথিকস)।
১৬৭৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হেগে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে চাকর ছাড়া তার পাশে কেউ ছিল না।
(দিরিপোর্ট/ডব্লিউএস/এমডি/নভেম্বর ২৪, ২০১৩)