সমঝোতা নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা
বাহরাম খান, দিরিপোর্ট : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সহসাই সমাধান হচ্ছে নাকি পরিস্থিতি সংঘর্ষের দিকে এগুচ্ছে- সবার মনেই এখন এই প্রশ্ন।
প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে বৈঠকের খবর নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষ থেকেই বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করা হচ্ছে না। অনেকে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের এমন অবস্থানকে ইঁদুর-বিড়াল খেলার সঙ্গে তুলনা করছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দিরিপোর্টকে বলেন, জনগণ ইঁদুর-বিড়াল খেলা পছন্দ করেন না। সমস্যা সমাধানের আন্তরিকতা থাকলে লুকোচুরি করার কিছু নেই।
এর আগেও সমাঝোতার উদ্যোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল এগিয়ে আসলে বিরোধী দলের পিছিয়ে যাওয়া, আবার বিরোধী দল এগিয়ে আসলে সরকারি দলের পিছিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
দুই দলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ও সৈয়দ আশরাফের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে গোপনীয়তার কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেন তারা।
তাদের মতে, কোনো পক্ষই ব্যর্থতার দায় নিতে চান না। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগেও আব্দুল জলিল ও আব্দুল মান্নান ভূইয়ার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন তারা।
বিএনপির সূত্র অনুযায়ী, বেগম খালেদা জিয়া তার আপোষহীন তকমা বজায় রাখতে চান। আন্দোলনের যে পর্যায়ে বিএনপি আছে সেখান থেকে দৃশ্যমান কোনো দুর্বল আচরণ বিএনপি প্রকাশ করতে চাচ্ছে না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রের দাবি, তাদের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে টেলিফোনসহ একাধিকবার আহ্বান জানানোর পরও সংলাপের কোনো পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. নাসিম দিরিপোর্টকে বলেন, সমঝোতার আশা সবাই করেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে তেমন আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে। সমঝোতা চাইলে গোপন বৈঠকের দরকার কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসিম বলেন, বৈঠক যেভাবেই হোক বিএনপির পক্ষ থেকে তো স্বীকার করা হচ্ছে না।
আপনার দলের অবস্থান কি? জবাবে নাসিম বলেন, দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদের রিপোর্ট করা হয়নি। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে পারছি না।
তাহলে মানুষ কি সমঝোতার আশা করতে পারে? জবাবে তিনি বলেন, শেষকথা বলার আমি কেউ নই। তবে দুই দলকেই আলোচনায় থাকতে হবে, তাহলে সমঝোতা হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি সবসময় শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। বৈঠক বিষয়ে দায়িত্বশীলরা তাদের বক্তব্য পরিষ্কার করেছেন। আমি শুধু বলব, সরকার আন্তরিক হলে সমঝোতা সম্ভব।
অনেকে লুকোচুরি হচ্ছে বলে নেতিবাচকভাবে মন্তব্য করছেন। জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, দেখুন রাজনীতিতে অনেক কৌশল থাকে। সব বিষয়ে সবাই একমত হবেন না। তবে প্রত্যাশিত ফল আসাটাই মূল কথা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবং বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যেহেতু এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি তাই সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দিলীপ বড়ুয়ার কাছে সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দিরিপোর্টকে বলেন, সমঝোতাই সবার প্রত্যাশা। আমরাও তাই চাই। আশা করি মহাসচিব পর্যায়ের নতুন আলোচনা সমাধানের দুয়ার খুলে দিবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন এ্যাটকোর নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইস্রাফিল আলম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সমঝোতার দিকে ইঙ্গিত করে না। সমঝোতা চাইলে গোপন বৈঠক করতে হবে কেন? এটা কূটকৌশল। নতুন প্রজন্ম কূটকৌশল পছন্দ করে না।
তার মানে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনাই নেই? জবাবে ইস্রাফিল আলম বলেন, সমঝোতা আটকে আছে সরকার প্রধানকে নিয়ে।
(দিরিপোর্ট/বিকে/এপি/জেএম/নভেম্বর ২৫, ২০১৩)