দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : ডিএনএ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি অধিদফতর স্থাপনের বিধান রেখে ‘ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইন- ২০১৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব, ভাই-বোন ও বংশধর নির্ধারণ এবং ধর্ষণ ও খুনের ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তকরণসহ বিদেশগামীদের ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন। এজন্য একটি আইন প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় খসড়া একটি সেলের মাধ্যমে আইন বাস্তবায়নের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো কিন্তু মন্ত্রিসভা অধিদফতর গঠনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরাই এই অধিদফতরে প্রাধান্য পাবেন। অধিদফতর গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটি সেলের মাধ্যমে আইন বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো জানান, বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি ও দেশের সাত শহরের মেডিকেল কলেজে বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি আছে। ল্যাবরেটরিগুলো পরবর্তীতে অধিদফতরের আওতায় চলে আসবে।

খসড়া আইনে সাতটি অনুচ্ছেদে ৩৯টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ, ডিএনএ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা, উপদেষ্টা পরিষদ ও কারিগরি কমিটি গঠন, ডাটাবেইজ তৈরি ও এর নিরাপত্তা বিধান, আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনে শাস্তি বিধান এ আইনের খসড়ায় রয়েছে।

তিনি বলেন, ডিএনএ আইন অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, কীভাবে ডিএনএ শনাক্তকরণ ও ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হবে, ডিএনএ কীভাবে বিশ্লেষণ করা হবে- এগুলো এ আইনে বলা হয়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উপদেষ্টা কমিটি কাজের প্রয়োজনে কারিগরি কমিটিও গঠন করতে পারবে। আইনের অধীনে বিধিমালা হবে, তাতেই সবকিছু বলা থাকবে।

তিনি আরো বলেন, এ আইনের অধীনে একটি জাতীয় ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। একটা সময় আসবে যখন প্রত্যেক মানুষের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। একই সঙ্গে তথ্যের গোপনীয়তাও রক্ষা করা হবে।

ডিএনএ নমুনা ধ্বংস, ধরন পরিবর্তন, দূষিত করলে খসড়া আইনে তিন থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, এ অপরাধের জন্য তিন লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রয়েছে।

এছাড়া, অনুমোদন ছাড়া ডিএনএ ফরেনসিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনুমোদন ছাড়া ডিএনএ তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অপরদিকে, বিনা অনুমতিতে জাতীয় ডাটাবেইজে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

এটি একটি অর্থ বিল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সংসদে যাওয়ার আগে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ নিতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। সভায় সকল উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

মোশাররাফ হোসাইন বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভাকে ‘সর্বদলীয়’ বলা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এ সরকারে আসার জন্য আমি তো সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কেউ না এলে তো করার কিছু নেই।’

(দিরিপোর্ট/আরএমএম/এসবি/এমএআর/নভেম্বর ২৫, ২০১৩)