জাহিদ হাসান, ঢাবি প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মদদ দিচ্ছে কোচিং সেন্টার ইউসিসি (ucc)। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই কোচিং সেন্টারের কিছু শিক্ষক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক' ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের আটকদের মধ্যে সাদিয়া সুলতানা ইউসিসির প্রশ্ন ফাঁসের কথা স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে সিনেট অধিবেশনে দেখানো হয়েছে।

সাদিয়া বলেন, আমি ইউসিসি কোচিং সেন্টারে কোচিং করেছি। ইউসিসির মাসুম নামের এক শিক্ষক আমাকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে ঢাবিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। সে অনুযায়ী তিনি আমাকে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মোবাইল ডিভাইসসম্পন্ন একটি ডিজিটাল ক্যালকুলেটর দেন।

সাদিয়া আরো বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে তিনি আমাকে ধারাবাহিকভাবে তিনটি সেটের প্রশ্নপত্রের উত্তর পাঠাতে থাকেন। আমি উত্তর দেখে ওএমআর পূরণ করার সময় কর্তব্যরত শিক্ষক দেখে ফেলেন এবং আমাকে আটক করেন।

এ ব্যাপারে ইউসিসির প্রোস্পেক্টাস থেকে ফার্মগেট শাখার একটি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তারা পরিচালকের নম্বর দিতে অস্বীকার করেন। পরে ওই নম্বর থেকে ফোন ব্যাক করে হুমকি দেওয়া হয়।

হুমকি দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, আমি পরিচালকের নাম জানি না। তারা এ ব্যাপারে কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে ইউসিসি জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বিভিন্ন প্রমাণসহ তিনি এ অভিযোগ করেন।

ভিসি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতিতে ইউসিসি কোচিং সেন্টার জড়িত। আটক শিক্ষার্থীরা পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি চলাকালে নয়টি কেন্দ্র থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়। তারা বিশেষ ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে জালিয়াতির চেষ্টা করে। আটক শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউসিসি কোচিং সেন্টারের নাম বলেছে। সিনেট অধিবেশনে তাদের জবানবন্দির ভিডিও চিত্র দেখানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই জালিয়াতি রোধে আমরা সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী বলেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইউসিসি কোচিং সেন্টার এই কুকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আটক ১৪ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি থানায় মামলা করেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে যারা জড়িত তাদের আটক করা হবে।

(দিরিপোর্ট/জেএইচ/এমএআর/নভেম্বর ২৫, ২০১৩)