জানুয়ারিতে ঢাকায় টিকফার প্রথম বৈঠক
দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : আগামী জানুয়ারিতে ঢাকায় সদ্য সম্পাদিত টিকফার (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের।
বহুল আলোচিত টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের পর মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সোমবার ইউএসটিআর কার্যালয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি ইউএসটিআর ওয়েন্ডি কাটলার টিকফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্রেই এর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র তৈরি না থাকায় সেটা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর পরিবর্তে ঢাকায় প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘টিকফা চুক্তির সঙ্গে জিএসপির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে একটি ব্রিফ দিয়েছেন। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে ইউএসটিআর যেসব শর্ত দিয়েছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য গত ১৪ নভেম্বর পাঠানো হয়েছে। ডিসেম্বরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ইউএসটিআর। সেটা কী হবে তা আমরা জানি না। তবে জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য টিকফার বৈঠকে প্রসঙ্গটি তোলা হবে।’
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরো বলেন, ‘জিএসপি সুবিধাটি বাতিল করা হয়েছে মূলত: একতরফাভাবে। এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না। এখন টিকফা চুক্তির আওতায় তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে টিকফা চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা ও বিরোধীতার জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘দুদেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের স্বার্থেই এ চুক্তি করা হয়েছে। এখানে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার কিছু নেই। যারা বিরোধীতা করছেন, তাদের দেশপ্রেম নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই এবং তারা আমার চেয়েও অনেক জ্ঞানী। কিন্তু চুক্তিতে কী আছে সেটা তারা জানেন না বলেই বিরোধীতা করছেন বলে আমার ধারণা।’
তিনি আরো বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এটি সবাইকে জানানো সম্ভব ছিল না। তবে সংশ্লিষ্ট যেসব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তারা কেউই নেতিবাচক মন্তব্য করেননি।’
চুক্তিটি নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন কীনা- প্রশ্ন করা হলে জিএম কাদের বলেন, ‘এখন তো এক ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাচ্ছে। তবে তাদের নিয়ে একটি চা-চক্রের আয়োজনের ইচ্ছা আছে আমার।’
টিকফার পটভূমি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ‘টিফা’র প্রস্তাব দেয়। পরবর্তীতে প্রতিটি সরকারের আমলেই এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। সর্বশেষ এর নাম পরিবর্তন করে ‘টিকফা’ রাখা হয়।
তিনি বলেন, ৯২টি দেশের সঙ্গে এবং এমন কী ভারতের সঙ্গেও ভিন্ননামে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। প্রতিটি দেশ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এ চুক্তি করেছে এবং এসব চুক্তি নিয়ে নেতিবাচক কিছু পাওয়া যায়নি। এ চুক্তির ফলে অন্যান্য যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি রয়েছে সেগুলোর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে কোনো দেশ চাইলে এ চুক্তি বাতিল করতে পারে। তবে সেটা লিখিতভাবে জানাতে হবে। অপরপক্ষ যদি সম্মতি দেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তা বাতিল হয়ে যাবে। আর কোনো জবাব না দিলে ১৮০ দিন পর চুক্তিটি এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে।’
নির্বাচনকালীন সরকার এ ধরনের কোনো চুক্তি করতে পারে কীনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চুক্তিটির বিষয়ে গত জুনেই নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এমতাবস্থায় চুক্তিটি সম্পাদন করা আমার একটি দায়িত্ব ছিল। এটি আরো আগেই হয়ে যেতো, কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারণে দেরি হয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেরি করার কারণ কী- জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘এর জবাব তারাই দিতে পারবেন।’
আসন্ন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রের সমর্থন লাভে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশে’ সরকার এ চুক্তি করেছে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, পলিটিক্যাল কোনো বিষয় নয়। চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এক মাস আগেই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারাই তারিখ নির্ধারণ করেছেন।’
(দিরিপোর্ট/এসআর/জেএম/নভেম্বর ২৬, ২০১৩)