এরশাদকে নেতা মানি না : কাজী জাফর
দিরিপোর্ট প্রতিবেদক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ বলেছেন, ‘আমরা এরশাদকে নেতা মানি না। এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আমরা নেই। তার আস্তানায় ফিরে যাবো না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনঢ়, জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে দিরিপোর্টকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ এ প্রেসিডিয়াম সদস্য এসব কথা বলেন।
কাজী জাফর আহমদ বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টিতে এখনও আছি। এরশাদ জাতীয় পার্টিতে থাকবেন কি না এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মনে সন্দেহ রয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতারাই সিদ্ধান্ত নিবেন জাতীয় পার্টিতে কারা থাকবে কারা থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, এরশাদের মতো এতো ডিগবাজি দেওয়া লোক পৃথিবীতে নেই। আর আমি একশত বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে এরশাদের মতো বিশ্বাসঘাতক নেতা দেখিনি।’
জাতীয় পার্টির সিনিয়র এ নেতা বলেন, `এরশাদ রাতারাতি থুতু ফেলে আবার সেই থুতু চেটে তুলবেন- এটা আমার কল্পনাতেও ছিলো না। তিনি (এরশাদ) বলেছিলেন, আমি দালাল হয়ে মরতে চাই না, একদলীয় নির্বাচনে গেলে জনগণ আমাকের থুতু দেবে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে বেহেস্তেও যেতে চাই না, কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে যাবো কিন্তু একদলীয় নির্বাচনে যাবো না। এরশাদ তার কথা রাখেননি। হঠাৎ শুনলাম, সাতজন মন্ত্রী নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিচ্ছেন তিনি। গত ১০০ বছরের ইতিহাসে বিশ্বাসভঙ্গের এমন নজির আমি দেখিনি।’
কাজী জাফর বলেন, ‘আমার জন্ম, কৈশোর ও তারুণ্য কেটেছে প্রগতিশীল রাজনীতি করে। জনগণের কাছে আমরা যে ওয়াদা করি তা রাখার চেষ্টা করি। আর কিছু ত্রুটি থাকলেও তার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাই। কিন্তু এরশাদ জাতির উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছেন।’
এরশাদ সরকারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ‘অনেকে বলে, এরশাদের নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেওয়ার পেছনে কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। কিন্তু তার টাকার কি দরকার ছিলো। জনগণের ভালোবাসার চেয়ে তো টাকা বড় নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠা। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি আমার নেতৃত্বাধীন ইউপিপি, সাংবাদিক আনোয়ার জাহিদ, বিএনপির শামছুল হুদা ও এম এ মতিন, আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান চৌধুরী মিলে জাতীয় পার্টি তৈরি করেছিলাম। এরশাদ তখন ছিলেন প্রধান সামরিক শাসক। আমি প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা সত্বেও পার্টির সাতজন মন্ত্রী হলো অথচ আমি জানলাম না।’
কাজী জাফর বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মত সিদ্বান্ত ছিলো জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে না ও সবার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস, এরশাদ ঠিকই মহাজোট ছাড়লেন তবে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন যাওয়ার জন্য নয় গৃহপালিত বিরোধী দল হওয়ার জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামরিক শাসন চলাকালীন সময়েও এরশাদ এতোটা স্বৈরাচার ছিলেন না, এখন যতটা স্বৈরাচার। তিনি পার্টির গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে প্রতিনিয়ত পার্টিতে নানা লোককে নিয়োগ ও বহিষ্কার করছেন।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক দাবি করেন, ‘এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আমি আর নেই। তবে এরশাদ যদি আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্বান্ত নেন আমি থলের বিড়াল বের করে দিবো।’
(দিরিপোর্ট/সাআ/এইচএসএম/নভেম্বর ২৬, ২০১৩)