ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা : অবরোধকারীরা মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে ও রেললাইনে আগুন দেয় এবং স্লিপার উপড়ে ফেলে। এতে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেফতারসহ তিনটি মামলা দায়ের করেছে।

সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণার পরপরই ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাত পৌনে আটটার দিকে শহরের টেঙ্কেরপাড়, পুরাতন কোর্টরোড, জগতবাজার, টি.এ.রোড, কালীবাড়ী মোড়, রেলগেইট, কলেজ রোড, কাজীপাড়া, শিমরাইলকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে তিন শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে রিকশা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ ২০/২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর হয়। এসময় পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এছাড়া কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কমপক্ষে পাঁচটি যানবাহন ভাংচুর করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘নাশকতা ঘটানোর দায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় ৯৩ জনের নামোল্লেখসহ ২৬৩ জনকে আসামী করা হয়েছে।’

এদিকে সোমবার গভীর রাতে কসবার সালদানদী ও মন্দভাগ রেল স্টেশনের কাছে রেল ব্রিজে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। ইমামবাড়ি স্টেশনের কাছে উপড়ে ফেলা হয় রেললাইনের পাত। মেরামত শেষে ট্রেন চলাচল শুরু করলেও কসবা স্টেশনের উত্তরে নোয়াপাড়া নামক স্থানে আবারো উপড়ে ফেলা হয় এবং রেললাইনের স্লিপারেও আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। এতে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কসবা উপজেলার ইমামবাড়ি রেলস্টেশনে ঢাকা-চট্টগ্রামগামী চট্রলা এক্সপ্রেসের একটি বগি ও ইঞ্জিনে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। পুলিশ সূত্র জানায়, অবরোধকারীরা প্রথমে একটি বগিতে ও পরে ইঞ্জিনে আগুন দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় পুলিশ কনেস্টেবল সুমনসহ কয়েকজন আহত হয়। আখাউড়া থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রেনের আগুন নেভায়।

এদিকে সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে দাঁড়ানো অবস্থায় ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচলকারি ডেমু ট্রেনে অন্তত তিনটি ককটেল ছুড়ে মারা হয়। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয়াসহ বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এদিকে কসবায় রেললাইন উপড়ে ফেলায় আখাউড়া রেলয়ে স্টেশনে তূর্ণা নিশিথা, উদয়ন এক্সপ্রেস,কর্ণফুলী এক্সপ্রেস,নাছিরাবাদ ও বাল্লা লোকাল ট্রেন আটকা পড়ে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসবের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ১৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার অমৃত লাল জানান, ‘ঢাকা-চট্রগ্রামগামী আন্ত:নগর মহানগর প্রভাতী ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে, ঢাকা-নোয়াখালীগামী উপকুল এক্সপ্রেস তালশহর স্টেশনে আটকা পড়ে আছে। বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল।’

(দ্য রিপোর্ট/এইচএমএস/ডব্লিউএস/নভেম্বর ২৭, ২০১৩)