দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভারতীয় উপমহাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মাওলানা আবদূর রশীদ তর্কবাগীশ ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার তারুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তাঁর পূর্ব পুরুষ বড়পীর হযরত আবদুল কাদির জিলানী রে.) এর বংশধর শাহ সৈয়দ দরবেশ মাহমুদ ১৩০৩ সালে ইসলাম প্রচার করতে বাগদাদ থেকে বাংলাদেশে আসেন। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর পক্ষে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি৷ পরবর্তীকালে তিনি যুক্ত প্রদেশের বেরেলি ইশতুল উলুম মাদ্রাসা, সাহারানপুর মাদ্রাসা, দেওবন্দ মাদ্রাসা ও লাহোরের এশাতুল ইসলাম কলেজে অধ্যয়ন করেন ও তর্কশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করে তর্কবাগীশ উপাধিতে ভূষিত হন ৷

কম বয়সে তিনি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন৷ মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে অসহায় দুধ বিক্রেতাদের সংগঠিত করে দুধের ন্যায্যমূল্য দিতে বাধ্য করেন৷ ১৯১৯ সালে তিনি খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন৷ ১৯২২ সালে বৃটিশবিরোধী সলংগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জেলে যান। এই আন্দোলন ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্তসিঁড়ি হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৩৩ সালে রাজশাহীর চাঁটকৈড়ে নিখিলবঙ্গ রায়ত খাতক সম্মেলন আহবান করে ঋণ সালিশী বোর্ড আইন প্রণয়নের প্রস্তাব রাখেন। ১৯৩৭ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে নাটোরে কৃষক সম্মেলন আহবান করেন৷

তিনি ছিলেন বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহচর৷ ১৯৩৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তিনি বাংলা, আসাম ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন৷ ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷ তিনি অবিভক্ত বাংলার এম.এল.এ হিসেবে তৎকালীন ব্যবস্থাপক পরিষদে পতিতাবৃত্তি নিরোধ, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও বিনা ক্ষতি পূরণে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের প্রস্তাব উত্থাপন করেন ৷

মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সভাপতিত্বে গঠিত ইউনাইটেড মুসলিম পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন৷ পরবর্তীকালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগে যোগ দেন৷ তিনি পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি৷ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত ছাত্র জনতার উপর পুলিশী নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে প্রাদেশিক পরিষদ থেকে বেরিয়ে এসে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন৷ তিনি ১৯৫২ সালে ২২শে ফেব্রুয়ারি মুসলীম লীগ ত্যাগ করে প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দল গঠন করেন এবং নুরুল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়৷ আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। মাওলানা তর্কবাগীশ ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷ তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি গণ আজাদী লীগ গঠন করেন। তিনি এরশাদের বিরুদ্ধে ১৫ দলীয় জোট গঠন করেছিলেন।

তিনি একজন সুসাহিত্যিকও ছিলেন ৷ তার রচিত উল্লেখযোগ্য বই হলো শেষ প্রেরিত নবী, সত্যার্থে ভ্রমণে, ইসলামের স্বর্ণযুগের ছিন্ন পৃষ্ঠা, সমকালীন জীবনবোধ, স্মৃতির সৈকতে আমি, ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রভৃতি ৷ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে ২০০০ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) দেওয়া হয়৷

তিনি ১৯৮৬ সালের ২০শে আগস্ট পরলোক গমন করেন।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/নভেম্বর ২৭, ২০১৩)