দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবিতে টানা কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও এবং অসহযোগসহ টানা কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম পর্যায়ে ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার সময় বলেন, সরকার তার অনুগত মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে দেশে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে।

ফখরুল বলেন, নির্বাচন তফসিল প্রত্যাহার না করলে ৪৮ ঘন্টার অবরোধ হচ্ছে প্রাথমিক কর্মসূচি। পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ১৮ দলের সম্ভাব্য পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে দ্য রিপোর্টকে বলেন, দাবি আদায়ে আমাদের কর্মসূচি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি যুদ্ধ নয়। তবে এতে মানুষের জনজীবন স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হয়। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ বলে মন্তব্য করেন দুদু।

দুদু আরও বলেন, জোর করে কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার অতীতে টিকে থাকতে পারেনি। শেখ হাসিনা সরকারও পারবে না। সংলাপের ব্যাপারে বিএনপি আশাবাদী। হয়তো আরও সময় লাগবে সমঝোতায় আসতে। সমঝোতা না হলে আগামী রবিবার থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, ১৮ দলের সামনে একটাই লক্ষ্য, যেকোনো ভাবে ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করা। সে অনুযায়ী নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ, দাখিল এবং প্রত্যাহারের প্রত্যেকটি ধাপে পর্যায়ক্রমে আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ধাপে তফসিল প্রত্যাখ্যান করে তা স্থগিতের দাবিতে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে রাজপথ, নৌপথ ও রেলপথ অবরোধের ৪৮ ঘণ্টার টানা কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিরোধী জোট। অবরোধ চলাকালীন সময়ে দেশব্যাপী হত্যা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে চলমান অবরোধকে আরও ১২ ঘন্টা বাড়িয়েছে জোটটি। এখন তা বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় শেষ না হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।

জোট সূত্র জানায়, তফসিল বাতিল করতে ১৮ দল পর্যায়ক্রমে একটার পর একটা কঠিন কর্মসূচি দিয়ে দেশ ‘অচল’করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের সব জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।

জানা যায়, ২ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জোট নেতা খালেদা জিয়াকে জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলনের এ ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

১৮ দলীয় জোটের নেতা লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান কর্মসূচির ব্যাপারে দি রিপোর্টকে বলেন, মঙ্গলবার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা এখনও আশাবাদী দেশের মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে শেখ হাসিনার শুভবুদ্ধি উদয় হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেবে।

আন্দোলন প্রসঙ্গে ইরান বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ, ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে হবে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২ ডিসেম্বর। আর প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ১৩ ডিসেম্বর।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/টিএস/এমডি/নভেম্বর ২৭, ২০১৩)