দ্বিতীয় দিনে সহিংসতায় নিহত ৮
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সংঘাত, সংঘর্ষ ও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সহিংসতায় ৮ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে তিনজন বিএনপি-জামায়াতের কর্মী, একজন আওয়ামী লীগ নেতা এবং চারজন নিরীহ মানুষ রয়েছেন।
এ ছাড়া কোথাও কোথাও বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। এতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ঢাকা: অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেলের আঘাতে রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়ার আহত আনোয়ারা বেগম আনু (৫৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোর ৪টার দিকে মারা গেছেন।
মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে খিলাগাঁও তিলপাপাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ অফিসের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হলে একটি এসে সরাসরি তার মাথায় আঘাত হানে।
তার মেয়ে নাসিমা আক্তার জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা মালিবাগ শাখা ন্যাশনাল ব্যাংকের বাবুর্চি হিসেবে চাকরি করতেন। থাকতেন দক্ষিণ গোড়ান শান্তিপুরের ২৮৯ নম্বর বাসায়।
নিহত আনোয়ারা বেগমের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট সদরের কোটাপাড়ায়। তার স্বামীর নাম মৃত দেলোয়ার হোসেন।
যশোর : যশোরে বুধবার সন্ধ্যায় জামায়াতের এক নেতাকে নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার যশোরে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে জেলা জামায়াতে ইসলামী। নিহত বুলবুল জামায়াতে ইসলামী উপশহর ইউনিয়ন শাখার সেক্রেটারি।
এলাকাবাসী জানান, সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বুলবুল বাড়ির একটি ঘরে কম্পিউটার কোচিং সেন্টারে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ৩-৪টি মোটরসাইকেলে কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে খুব কাছ থেকে বুলবুলের মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়।
খুনিরা পালিয়ে গেলে এলাকাবাসী বুলবুলকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যান তিনি।
বুলবুল উপশহর এস ব্লকের ডা. ওয়াজেদ আলীর ছেলে। তিনি ছিলেন একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তবে তিনি চাকরি না করে নিজ বাড়িতে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার খুলেছিলেন।
এদিকে বুলবুল হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে জামায়াত-শিবিরের বিপুল সংখ্যক কর্মী জড়ো হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। সেখানে তারা বিরামহীন বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। এ সময় আয়োজিত সমাবেশে জামায়াত নেতারা বৃহস্পতিবার যশোর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেন। রাত পৌনে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানাসহ আশপাশের এলাকা জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দখলে ছিল। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা।
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ বলেন, ‘কারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশ তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে জামায়াত নেতাদের দাবি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ বুলবুলকে খুন করেছে।’
সিরাজগঞ্জ : জেলার বেলকুচিতে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এরা হলেন- বেলকুচি উপজেলা ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ (২৮) ও ধুকুরিয়া বেড়া এলাকার জামায়াত নেতা আব্দুল জলিল (৫৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধের সমর্থনে বেলা ১২টার দিকে মিছিল বের করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি উপজেলার মুকন্দগাতী গার্লস স্কুলের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। এতে ওই দুইজন নিহত হয়। এছাড়া আহত হন উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া, যুবদল নেতা রাসেল আহমেদসহ প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী।
সাতক্ষীরা: জেলার কলারোয়া উপজেলার সাতক্ষীরা- যশোর সড়কের গোপিনাথপুরে অবরোধের জন্য অর্ধেক কেটে রাখা গাছ ভেঙে পড়ে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম আম্বিয়া খাতুন (২৭)। তিনি গোপীনাথপুরের হারুনার রশিদের স্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা একটি গাছ অর্ধেক কেটে রেখে যায়। দুপুরে আম্বিয়া খাতুন বাড়ি যাওয়ার সময গাছটি তার মাথার ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ-দারা খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর: গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার চুপাইর এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা কামালউদ্দিন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কামালউদ্দিন কালিগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি মইশাদী গ্রামে।
কালিগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল আলম ভূইয়া এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম : নগরীর পটিয়ায় অবরোধকারীদের ধাওয়ায় একটি সিনজি অটোরিক্সা উল্টে যাওয়ায় এক যাত্রী নিহত হয়েছেন।
বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তবে নিহতের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে সিটি গেইট এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় তারা পুলিশের ৪টি মোটরসাইকেল ও আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেয়।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজউদ্দিন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এসবি/এনডিএস/এইচএসএম/নভেম্বর ২৭, ২০১৩)